বাধা পেরিয়ে মহাসড়ক অবরোধ ইবি শিক্ষার্থীদের, পাশেই ছাত্রলীগের জঙ্গিবিরোধী মিছিল
কোটা সংস্কারের দাবিতে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক অবরোধ করে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তবে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক দিয়ে বের হয়ে মহাসড়কে যেতে বাধার মুখে পড়েন তাঁরা। সেখানে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সড়কে অবস্থান নিতে তাঁদের বারণ করেন। কয়েক মিনিট পর সেই বাধা পেরিয়ে মহাসড়কে মিছিল নিয়ে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে মহাসড়কে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলের সময় পাশেই প্রধান ফটকের ভেতরে মিছিল ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা। তাঁরা জামায়াত, বিএনপি ও জঙ্গিবিরোধী বিভিন্ন ধরনের স্লোগান ও বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ সময় পুলিশের অর্ধশতাধিক সদস্য ও ডিবি পুলিশ সতর্ক অবস্থানে ছিল।
সরেজমিন দেখা যায়, বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ক্যাম্পাসের বটতলা থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ থেকে প্রধান ফটক দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় ফটক বন্ধ করে দিলেও বাধা উপেক্ষা করে মহাসড়কে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। মহাসড়কে অবস্থানের সময় উভয় পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। সেখানে শিক্ষার্থীরা জাতীয় সংগীত গেয়ে তাঁদের কর্মসূচি শুরু করেন।
এরপর ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘কোটাপদ্ধতি নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ‘কোটা না মেধা? মেধা মেধা’, ‘আপস না সংগ্রাম? সংগ্রাম সংগ্রাম’সহ নানা স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা।
মহাসড়কে ২৫ মিনিট অবস্থানের পর শিক্ষার্থীরা মূল ফটক দিয়ে ক্যাম্পাসের ভেতরে চলে যান। এ সময় মূল ফটকের ভেতরে থাকা শতাধিক ছাত্রলীগ নেতা–কর্মী স্লোগান দিতে দিতে ক্যাম্পাসের ফুটবল মাঠের দিকে চলে যান। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মূল ফটকের ভেতরে মৃত্যুঞ্জয়ী ম্যুরালের সামনে অবস্থান নেন। সেখানে বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত প্রতিবাদ কর্মসূচি করেন। সেখানে প্রতিবাদী গান, কবিতা ও পথনাটক পরিবেশন করা হয়। কুমিল্লায় কোটাবিরোধীদের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে ৩০ সেকেন্ড নীরবতা পালন করেন তাঁরা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, তাঁদের এ আন্দোলন বৈষম্যের বিরুদ্ধে ও সাম্যের পক্ষে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন হয়েছে ১৯৫২ এবং ১৯৭১ সালে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করতে হচ্ছে। বর্তমানে বিদ্যমান কোটাব্যবস্থার কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা চাকরিতে বঞ্চিত হচ্ছেন। কোটা বহাল রেখে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অন্যায় করা হচ্ছে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ইবির সমন্বয়ক সুইট বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। তবু তাঁরা আমাদের আন্দোলনকে সমর্থন করছেন। একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আজ আমরা শ্রেণিকক্ষ ফেলে রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছি। আমরা বিশৃঙ্খলা না করে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
এর আগে রবি ও সোমবার দুই ঘণ্টা করে এবং গতকাল বুধবার পাঁচ ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করেন তাঁরা। এ সময় সড়কের দুই পাশে প্রায় তিন কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের প্রায় ৩২ জেলার মানুষের সড়কপথে যোগাযোগের একমাত্র মহাসড়ক এটি। একই দাবিতে গত বুধবার ২৫ মিনিট ও শনিবার ৩০ মিনিট মহাসড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।