ত্বকীসহ নারায়ণগঞ্জের সব হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইলেন রফিউর রাব্বি

তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও বিচার শুরুর দাবি জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে মোমশিখা প্রজ্বালন। বুধবার সন্ধ্যায় আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার ও মিলনায়তন প্রাঙ্গণে
ছবি: দিনার মাহমুদ

মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীসহ নারায়ণগঞ্জের সব হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইলেন নিহত ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি। তিনি বলেন, ত্বকীর ঘাতকেরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না। প্রশাসন ঘাতক পরিবারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

বুধবার সন্ধ্যায় নগরের আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার মিলনায়তন প্রাঙ্গণে ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ১১৯ মাস উপলক্ষে আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচিতে রফিউর রাব্বি এ দাবি জানান। ত্বকী হত্যার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি পালন করছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।

সংগঠনের সভাপতি ভবানী শংকর রায়ের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক শাহীন মাহমুদের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন ত্বকীর বাবা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এ বি সিদ্দিক, দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সহসভাপতি ধীমান সাহা, ন্যাপ জেলা সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন, সিপিবির শহর সভাপতি আবদুল হাই, গণসংহতি আন্দোলন জেলার সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, শ্রুতি সাংস্কৃতিক একাডেমির সভাপতি মাঈনুদ্দিন মানিক, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের জেলা সভাপতি প্রদীপ সরকার প্রমুখ।

রফিউর রাব্বি বলেন, দেশে বিচারব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে। স্বাধীনতার আগে ও পরে কখনো বিচারব্যবস্থা এতটা খারাপ ছিল না। আমরা যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা পেলাম, সে পাকিস্তানের বিচারব্যবস্থাও এমন সরকার নিয়ন্ত্রিত নয়। সরকার আজ নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে দলীয় বাহিনীতে পরিণত করেছে। এসব প্রতিষ্ঠান জনগণের টাকায় পরিচালিত হলেও তারা এখন জনগণের নয়, সরকারদলীয়দের নিরাপত্তায় নিয়োজিত। ব্রিটিশরা ২০০ বছরে দেশ থেকে যে অর্থ লুট করেছে, বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর লোকেরা তার চেয়ে বেশি অর্থ গত ১৪ বছরে বিদেশে পাচার করেছে।

রফিউর রাব্বি অভিযোগ করে বলেন, ‘দেশে বিচারব্যবস্থা স্বাধীন হলে একটি হত্যার বিচারের অভিযোগ তৈরি হয়েও তা ১০ বছর আটকে থাকে না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ত্বকী হত্যার বিচার বন্ধ করে রাখা হয়েছে। আমরা এ গণবিরোধী বিচারব্যবস্থার পরিবর্তন চাই। আমরা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ফিরে পেতে চাই। যেখানে সবার বিচার পাওয়ার অধিকারের নিশ্চয়তা থাকবে, কথা বলার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে।’

ত্বকীর ঘাতকেরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না অভিযোগ করে রফিউর রাব্বি বলেন, নারায়ণগঞ্জের প্রশাসন ঘাতক পরিবারের পক্ষ নিয়ে কাজ করছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, অবস্থা দেখে মনে হয়, ওসমান পরিবারের অপরাধ ঢাকা দেওয়াই তাদের মূল দায়িত্ব। কোনো অপরাধেই তাদের আইনের আওতায় আনা হয় না। তিনি সাগর-রুনি, তনু হত্যা এবং নারায়ণগঞ্জে সংঘটিত সব হত্যার বিচার দাবি করেন।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরের শায়েস্তা খাঁ সড়কের বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজের দুদিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। ২০১৪ সালের ৫ মার্চ তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের নির্দেশে তাদেরই টর্চার সেলে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করে। অচিরেই আদালতে অভিযোগপত্র পেশ করা হবে। কিন্তু এ অভিযোগপত্র আজও আদালতে পেশ করা হয়নি।