ফরিদপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিচার দাবি

ফরিদপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাময়িক বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক মাইনুল এহসান
ছবি: প্রথম আলো

ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাশতুরা মোশারফ ও সাধারণ সম্পাদক ইমরুল হাসানের বিচার এবং সংগঠন থেকে তাঁদের বহিষ্কারের দাবি জানানো হয়েছে।

ওই মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (সদ্য সাময়িক বহিষ্কৃত) পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী মাইনুল এহসান ও কলেজের চতুর্থ বর্ষের সাবেক শিক্ষার্থী জুনায়েদ আহমেদ সংবাদ সম্মেলন করে এসব দাবি জানিয়েছেন।

আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের মরহুম অ্যাডভোকেট শামসুদ্দীন মোল্লা মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। লিখিত বক্তব্যে মাইনুল এহসান বলেন, ‘গত ১৩ এপ্রিল “ইভটিজিং”–এর কথিত অভিযোগ এনে ছাত্রলীগ কলেজ শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আমাকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।’

‘এ অভিযোগ সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন’ দাবি করে মাইনুল এহসান বলেন, রাজনৈতিকভাবে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে মানহানির চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি বলেন, কোনো ধরনের কারণ দর্শানো ছাড়া সভাপতি ও সম্পাদক সাময়িকভাবে বহিষ্কারের যে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন, তা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠণতন্ত্র পরিপন্থী। তিনি আরও বলেন, সভাপতির বিভিন্ন অনৈতিক কাজের প্রতিবাদ করায় তিনি রোষানলে পড়েন এবং এ জন্য তিনি নানাভাবে তাঁকে ও তাঁর সহযোগীদের হয়রানি করে আসছেন।

একই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের সাবেক শিক্ষার্থী জুনায়েদ আহমেদ বলেন, ‘আমার ও আমার বান্ধবীকে গালাগালি করেছিলেন সভাপতি ও সম্পাদকের অনুসারীরা। আমি অধ্যক্ষের কাছে ওই ঘটনার বিচার চাওয়ায় অধ্যক্ষ আমাকে কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজে মাইগ্রেশন (স্থানান্তর) করে আমার প্রতি অন্যায় আচরণ করেছেন। এর পেছনে কলকাঠি নাড়িয়েছেন মাশতুরা ও তাঁর অনুসারীরা।’ তিনি আরও বলেন, মাশতুরার সঙ্গে তাঁর মতের মিল না হওয়ায় কলেজ ছাত্রাবাসে তাঁর ওপর দুই দফা প্রাণঘাতী হামলা হয়েছে। এ তথ্য–প্রমাণ লোপাটের জন্য তাঁর মুঠোফোন ছিনতাই করা হয়েছে। এ জন্য থানায় জিডি করেও আইনের কোনো সহায়তা পাননি তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাশতুরা মোশারফ ওরফে ঐশিকা প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৩ এপ্রিল সাংগঠনিক সম্পাদক মাইনুল এহসান প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে অশ্লীল কথা বলেন। ওই শিক্ষার্থী এ ব্যাপারে আমাকে জানায়। পরে ওই শিক্ষার্থী অধ্যক্ষকে লিখিতভাবে জানায়। সমগ্র ঘটনাটি সিসিটিভি ক্যামেরায় রেকর্ড করা রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, এ জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সঙ্গে পরামর্শ করে তাঁকে সাময়িকভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি দাবি করে বলেন, ‘সাময়িক বহিষ্কারের আগে কারণ দর্শাতে হবে ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে এ জাতীয় কোনো কথা বলা নেই। ছাত্রলীগের পদ নিয়ে একজন শিক্ষার্থী ইভটিজিং করবে, তা মেনে নেওয়া যায় না বিধায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

জুনায়েদ আহমেদের বিষয়ে মাশতুরা বলেন, জুনায়েদ বেপরোয়া চলাফেরা করেন। তাঁর ব্যাপারে সব শিক্ষার্থী আতঙ্কে থাকতেন। ভয় দেখানো, লাশ ফেলে দেওয়ার হুমকি দিতেন তিনি।

এসব বিষয় নিয়ে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, জুনায়েদ আহমেদের অভিযোগের ভিত্তিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু তদন্ত কমিটি তাঁর অভিযোগের সত্যতা পায়নি। পরে জুনায়েদের বিরুদ্ধে পাওয়া অভিযোগ তদন্ত করে ও শিক্ষক কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী জুনায়েদকে মাইগ্রেশন দিয়ে অন্য মেডিকেল পাঠানো হয়েছে।