শপথের আগেই হত্যা মামলার আসামি ইউপি চেয়ারম্যান, শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ

নবনির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান এজাজ ইমতিয়াজ
ছবি: সংগৃহীত

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার নাগদাহ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে (ইউপি) আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হায়াত আলীকে হারিয়ে ১৬ মার্চ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী এজাজ ইমতিয়াজ ওরফে বিপুল। কয়েক দিন পর শপথ। তার আগেই একটি হত্যা মামলার আসামি হয়েছেন তিনি। গতকাল শুক্রবার মধ্যরাতে তাঁর শাস্তির দাবিতে এলাকায় বিক্ষোভ করেন স্থানীয় লোকজন।

১১ মার্চ নির্বাচনী সহিংসতায় আহত আওয়ামী লীগ কর্মী দবির আলী (৫৫) গতকাল সকালে মারা যান। এরপর আগের হত্যাচেষ্টার মামলাটি হত্যা মামলায় পরিণত হয়। দবির আলীর ছেলে মোস্তাফিজুর ১২ মার্চ আলমডাঙ্গা থানায় ওই মামলা করেন। মামলায় এজাজ ইমতিয়াজ হুকুমের আসামি।

এদিকে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান হত্যা মামলার আসামি হওয়ায় বিষয়টি আজ এলাকায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। প্রতিপক্ষের লোকজন এলাকায় রটিয়ে দেন, এজাজ ইমতিয়াজ চেয়ারম্যানের চেয়ারে বসতে পারছেন না। হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে তাঁকে কারাগারে যেতে হবে।

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ চুয়াডাঙ্গার উপপরিচালক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আরাফাত রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ভোট গ্রহণ শেষে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত চেয়ারম্যানের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এখনো গেজেটে নাম ওঠেনি। গেজেটে নাম ওঠার পর শপথ গ্রহণ শেষে তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেবেন।

স্থানীয় সরকার বিভাগের এই উপপরিচালক বলেন, ‘স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯-এর ৩৪ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো চেয়ারম্যান বা সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে ফৌজদারি মামলার অভিযোগপত্র গৃহীত হলে বা আদালত অপরাধ আমলে নিলে, সে ক্ষেত্রে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের মতে চেয়ারম্যান বা সদস্যের ক্ষমতা প্রয়োগ পরিষদের স্বার্থের পরিপন্থী বা প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণে সমীচীন না হলে সরকার লিখিত আদেশের মাধ্যমে চেয়ারম্যান অথবা সদস্যকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করতে পারবে।’

১৬ মার্চ নাগদাহ ইউপি নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ছিলেন নয়জন। তবে নির্বাচনী প্রচারণার প্রথম থেকেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হায়াত আলী (নৌকা) ও একই কমিটির নির্বাহী সদস্য এজাজ ইমতিয়াজ (চশমা)।

১১ মার্চ নির্বাচনী সহিসংতায় দুই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা সংঘর্ষে জড়ান। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১৭ জন আহত হন। এ ঘটনায় দবির আলীর ছেলে মোস্তাফিজুর বাদী হয়ে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী এজাজ ইমতিয়াজকে হুকুমের আসামি করে ২৫ জনের নামে মামলা করেন। অন্যদিকে এজাজ ইমতিয়াজের সমর্থক একই গ্রামের ফুরন খাতুন বাদী হয়ে হায়াত আলীসহ তাঁর পক্ষের ২২ জনের নামে একটি মামলা করেন।

প্রতিপক্ষের দায়ের করা মামলায় ২১ মার্চ আলমডাঙ্গার আমলি আদালতে এজাজ ইমতিয়াজসহ তাঁর পক্ষের ১৭ জন উপস্থিত হয়ে জামিন প্রার্থনা করলে বিচারক তাঁদের জামিন মঞ্জুর করেন। এজাজ জানান, বাকি আটজনের জামিনে মুক্তিসহ মামলার বিষয়টি তিনি আইনিভাবেই লড়বেন। অন্যদিকে হায়াত আলীর পক্ষে ২২ জনই আদালতে হাজির হয়ে জামিন প্রার্থনা করলে ঝন্টু মিয়া নামে একজনের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়। বাকি ২১ জনকে জামিন দেওয়া হয়।

আলমডাঙ্গা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ১১ মার্চ হামলা-সংঘর্ষে আওয়ামী লীগ কর্মী দবির আলী আহত হলে তাঁর ছেলে মোস্তাফিজুর বাদী হয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ করে ২৫ জনের নামে থানায় মামলা করেছিলেন। ২৪ মার্চ দবির আলীর মৃত্যুর পর মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়। আলোচিত মামলার ১৭ জন আসামি জামিনে আছেন। পলাতক আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।