ভিজিএফের চাল না পেয়ে বিপাকে ১৩০০ জেলে

প্রকট আর্থিক সমস্যার কারণে ঈদের কেনাকাটা বন্ধ অনেকের, নেই ঈদের কোনো আমেজও।

নৌকায় অলস সময় কাটাচ্ছেন জেলেরা। চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল এলাকার জেলেপাড়াসংলগ্ন মেঘনার পাড়েছবি: সংগৃহীত

চাঁদপুরের মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলায় জাটকা রক্ষার কর্মসূচিতে প্রায় ১ হাজার ৩০০ জেলে ভিজিএফের খাদ্যসহায়তা (চাল) পাচ্ছেন না। নিষেধাজ্ঞা থাকায় মেঘনায় মাছও ধরতে পারছেন না তাঁরা, আয়রোজগার বন্ধ। এ কারণে গত মার্চ মাস থেকে পরিবার নিয়ে বিপাকে রয়েছেন এসব জেলেরা। প্রকট আর্থিক সমস্যার কারণে ঈদের কেনাকাটা বন্ধ অনেকেরই, নেই ঈদের কোনো আমেজও।

স্থানীয় মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়, মতলব উত্তর উপজেলায় নিবন্ধিত (কার্ডধারী) জেলে ৮ হাজার ২২ জন। গত ফেব্রুয়ারি থেকে জাটকা রক্ষার কর্মসূচির আওতায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ করা ভিজিএফের চাল পাচ্ছেন ৭ হাজার ২২২ জেলে। বরাদ্দের অভাবে বাকি ৮০০ জেলে ভিজিএফের চাল পাচ্ছেন না। মতলব দক্ষিণ উপজেলায় নিবন্ধিত মোট জেলে ৫ হাজার ৩১৮ জন। তাঁদের মধ্যে ভিজিএফের চাল পাচ্ছেন ৪ হাজার ৮৩১ জেলে। বাকি ৪৮৭ জেলে ভিজিএফের চাল পাচ্ছেন না।

সূত্রটি আরও জানায়, মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলায় মোট নিবন্ধিত জেলে ১৩ হাজার ৩৪০ জন, ভিজিএফের চাল পাচ্ছেন ১২ হাজার ৫৩ জন। ওই ২ উপজেলায় চাল পাচ্ছেন না প্রায় ১ হাজার ৩০০ জেলে। গত ফেব্রুয়ারি থেকে প্রত্যেক জেলেকে মাসে ৪০ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে। আগামী মে মাস পর্যন্ত মোট চার মাস তাঁরা ওই চাল পাবেন। জাটকা রক্ষায় এ উদ্যোগ। গত ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাস মেঘনা নদীর চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার এলাকায় সব প্রকার মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

জানতে চাইলে মতলব উত্তর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস ও মতলব দক্ষিণ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মনোয়ারা বেগম বলেন, নিবন্ধিত মোট জেলের তুলনায় ভিজিএফের চালের বরাদ্দ এসেছে কম। সে কারণে তাঁর উপজেলায় বেশ কিছু জেলে চাল পাচ্ছেন না। বিষয়টি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ এলে তাঁরা চাল পাবেন।

গতকাল রোববার সকালে মতলব উত্তর উপজেলার এখলাশপুর, ষাটনল ও আমিরাবাদ এবং মতলব দক্ষিণ উপজেলার বাইশপুর ও কাজিরবাজার এলাকার কয়েকটি জেলেপাড়া ঘুরে দেখা যায়, সেখানকার বেশ কিছু জেলে পরিবার অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। এসব পরিবারের সদস্যদের চোখে-মুখে ক্ষুধা ও অভাব-অনটনের ছাপ। উচ্ছ্বাস নেই এসব জেলে পরিবারের শিশুদের মনে। পেটে ক্ষুধা নিয়ে মনমরা হয়ে আছেন ওই জেলে পরিবারের সদস্যরা। ঈদ ঘনিয়ে এলেও সেখানে ন্যূনতম ঈদের আমেজ নেই।

মতলব উত্তরের এখলাশপুর এলাকার জেলে মো. রেফায়েত বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা থাওনে গত মার্চ থেইকা মেঘনায় জাল ফালাইতে পারি না। মাছ ধরা বন্ধ। আয়রোজগার, জমিজমা নাই। মৎস্য অফিস থেইক্কা কোনো চাল পাইতাছি না। কারো সাহায্য-সহযোগিতাও নাই। ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী ও মা–বাবা লইয়া খাইয়া না–খাইয়া আছি। সংসারের খরচই জোটতেছে না। ঈদের কেনাকাটা ও সওদাপাতি কিনুম ক্যামনে। এবার আমাগো ঈদ অইবো না।’