হিরো আলমের বিরুদ্ধে শ্রীপুরে অর্থ আত্মসাৎ ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ

আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম
ছবি: প্রথম আলো

অর্থ আত্মসাৎ ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ায় গাজীপুরের শ্রীপুর থানায় আলোচিত আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমসহ তিনজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন রুবেল মুন্সি (২২) নামের এক তরুণ। গত শুক্রবার দুপুরে থানায় এই অভিযোগ দেন তিনি। আজ রোববার সকালে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ওসি মো. মনিরুজ্জামান বলেন, হিরো আলম ও তাঁর দুই সহযোগীকে অভিযুক্ত করে ৫ আগস্ট দুপুরে রুবেল মুন্সি নামের এক তরুণ একটি অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ সেটি গ্রহণ করে তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অভিযোগটি তদন্তের জন্য ইতিমধ্যে একজন উপপরিদর্শককে (এসআই) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্তের পর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রুবেল মুন্সি কুমিল্লার মতলব উপজেলার বড়ইলদা গ্রামের সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে। তিনি গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার ভাংনাহাটি এলাকার একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন বগুড়া সদর থানার রুলিয়া বাজার এলাকার আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম (৩৫), মো. লিমন (২৫) ও শুভ (৩০)।

অভিযোগে রুবেল মুন্সি উল্লেখ করেন, পাঁচ মাস আগে হিরো আলমের মালিকানাধীন অনলাইন প্রতিষ্ঠানে ১০ হাজার টাকা বেতনে তিনি চাকরি করতেন। ২০২১ সালে হিরো আলম তাঁর কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলেন। এ ছাড়া ৭ মাসের বেতনের ৭০ হাজার টাকা তিনি হিরো আলমের কাছে জমা রাখেন। পরে মোট পাওনা ৯০ হাজার টাকা ফেরত চাইলে হিরো আলম টালবাহানা শুরু করেন। একপর্যায়ে চাকরি ছেড়ে তিনি গাজীপুরের শ্রীপুরে একটি ফুড প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ‘গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় হিরো আলম তাঁর দুই সহযোগীকে নিয়ে আমার বর্তমান কর্মস্থলে আসেন। টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে আমাকে ফোনে কর্মস্থল থেকে বের হতে বলেন। বের হলে হিরো আলমের ব্যক্তিগত গাড়িতে তুলে আমাকে মেডিকেল মোড়ে নিয়ে যান। সেখানে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের সহযোগিতায় আমার একটি ল্যাপটপ, জিমেইল আইডি, ফেসবুক আইডির পাসওয়ার্ড নিয়ে রাত তিনটার দিকে ছেড়ে দেন। এ বিষয়ে পরবর্তী সময়ে আইনের আশ্রয় নিলে ও বাড়াবাড়ি করলে মারধরসহ জানমালের ক্ষতি করার হুমকি দেন তিনি।’

অভিযোগের বিষয়ে আশরাফুল আলম বলেন, তাঁর পাঁচটি ইউটিউব চ্যানেল আছে। কিন্তু ইংরেজি না জানায় চ্যানেল পরিচালনায় অসুবিধা হতো তাঁল। রুবেল নামের ওই ব্যক্তি একদিন তাঁর কার্যালয়ে এসে চ্যানেল পরিচালনার আগ্রহ দেখান। তাঁর আগ্রহ দেখে চ্যানেল পরিচালনার জন্য একটি ল্যাপটপ ও কয়েকটি ইউটিউব চ্যানেলের পাসওয়ার্ড দেওয়া হয়। বিনিময়ে মাস শেষে তাঁকে সম্মানী দেওয়া হতো। কয়েক মাস আগে ল্যাপটপ ও পাসওয়ার্ড নিয়ে হঠাৎ উধাও হন রুবেল। পরে খবর পান, রুবেল গাজীপুরের শ্রীপুরে চাকরি করেন। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ল্যাপটপ ও পাসওয়ার্ড নেওয়ার জন্য গাজীপুরের মাওনায় যেতে বলেন।

আলম আরও বলেন, ডিশের ব্যবসা করায় মাওনা এলাকার ডিশ ব্যবসায়ী সবুজের সঙ্গে পরিচয় ছিল। সবুজ মাওনা পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। এসআই রফিকুল ইসলাম রুবেলকে ল্যাপটপ ও পাসওয়ার্ড ফেরত দিতে বললে দুটি চ্যানেলের পাসওয়ার্ড ও ল্যাপটপ ফেরত দেন। দুই দিনের মধ্যে বাকি চ্যানেলের পাসওয়ার্ড ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও অন্যের প্ররোচনায় তাঁকে অপদস্থ করতে উল্টো থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।

মাওনা এলাকার ডিশ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সবুজ মুঠোফোনে বলেন, আলমের সঙ্গে পূর্বপরিচয় ছিল। রুবেল নামের ওই তরুণ মাওনায় আত্মগোপন করে আছেন জানালে তিনি মাওনা ফাঁড়ির এসআই রফিকুল ইসলামের সঙ্গে আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। এসআই রফিকুলের কাছে তিনি অপকটে ল্যাপটপ ও ইউটিউব চ্যানেলের পাসওয়ার্ড থাকার কথা স্বীকার করেন। পুলিশের মধ্যস্থতায় তিনি ল্যাপটপ ও দুটি চ্যানেলের পাসওয়ার্ড ফেরতও দেন।

তবে মাওনা হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, ‘হিরো আলমের সঙ্গে আমার কখনো দেখা হয়নি। তিনি এই এলাকায় এসেছিলেন কি না, তা–ও আমার জানা নেই।’