রংপুর বিভাগের সঙ্গে সারা দেশের বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা, দুর্ভোগ

ফাইল ছবি

গাইবান্ধার পলাশবাড়ী পৌরসভার মেয়রের সঙ্গে দুই জেলার বাস মালিক সমিতির দ্বন্দ্বের জেরে বগুড়া হয়ে রংপুর বিভাগের আট জেলার সঙ্গে সারা দেশের দূরপাল্লা ও অভ্যন্তরীণ রুটের সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। রংপুর জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ মালিক সমিতির সিদ্ধান্তে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ করা হয়।

রংপুর জেলা বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির এই সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বগুড়া জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ পরিবহন মালিক সমিতিও আজ সকাল থেকে রংপুর বিভাগের সঙ্গে বগুড়ার সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এদিকে বাস-কোচ বন্ধের আকস্মিক এ সিদ্ধান্তে বগুড়া থেকে রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াতকারী যাত্রীরাও চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। বাস না পেয়ে অনেকেই বগুড়া রেলস্টেশনে ভিড় করেছেন। এতে ট্রেনে যাত্রীর চাপ বেড়েছে।

রাজশাহী বিভাগীয় সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি এবং বগুড়া জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, বগুড়া হয়ে রংপুর বিভাগের আট জেলায় গড়ে প্রতিদিন এক হাজার বাস চলাচল করে। এর মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খাগড়াছড়িসহ বিভিন্ন রুটে ৭০০ দূরপাল্লার কোচ রয়েছে। বগুড়া থেকে রংপুর বিভাগের বিভিন্ন রুটে ১৭৫টি বাস চলাচল করে । এ ছাড়া রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলার মালিকদেরও সমানসংখ্যক বাস বগুড়া হয়ে রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা, নাটোর, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন জেলায় চলাচল করে।

গাইবান্ধার পলাশবাড়ী পৌরসভার মেয়রের সঙ্গে রংপুর ও কুড়িগ্রাম বাস মালিক সমিতির দ্বন্দ্বের জেরে রংপুর বিভাগের আট জেলা থেকে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার রুটের বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তাদের সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বগুড়া বাস, মিনিবাস, কোচ পরিবহন মালিক সমিতি রংপুর বিভাগের সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে।

আমিনুল ইসলাম আরও বলেন, গাইবান্ধার পলাশবাড়ী পৌরসভার মেয়রের সঙ্গে রংপুর জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ মালিক সমিতির দ্বন্দের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত বগুড়া হয়ে রংপুর বিভাগের কোনো বাস-কোচ চলাচল করবে না এবং বগুড়া থেকেও রংপুর বিভাগের কোনো রুটে বাস কোচ পাঠানো হবে না।

রংপুর জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি আবদুল মান্নান আজ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, গাইবান্ধার পলাশবাড়ী পৌরসভার মেয়র গোলাম সারোয়ারের মালিকানার  জান্নাত পরিবহনের ১১টি বাস ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশালসহ বিভিন্ন রুটে চলাচল করে। কোনো প্রকার আলাপ–আলোচনা ছাড়াই তিনি কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী থেকে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পর্যন্ত একটি বাস চালানো শুরু করেন। কুড়িগ্রাম জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা এ ঘটনার প্রতিবাদ জানান। এর জেরে জান্নাত পরিবহনের মালিক ও পলাশবাড়ী পৌরসভার মেয়র গোলাম সারোয়ার কুড়িগ্রাম মালিক সমিতির আটটি বাস পলাশবাড়ীতে আটকে দেন। এর প্রতিবাদে রংপুর বিভাগের আট জেলা থেকে সারা দেশে বাস-চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

বগুড়া ও রংপুর জেলা বাস মালিক সমিতির নেতাদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পলাশবাড়ী পৌরসভার মেয়র এবং পলাশবাড়ী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারোয়ার বলেন, ‘আমার মালিকানায় জান্নাত পরিবহনের ১১টি বাস উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশালসহ বিভিন্ন রুটে চলাচল করে। কুড়িগ্রাম মালিক সমিতিকে গাইবান্ধা বাস, মিনিবাস, কোচ, মাইক্রোবাস মালিক সমিতির পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে নতুন করে গত মঙ্গলবার ভূরুঙ্গামারী-কুয়াকাটা রুটে জান্নাত পরিবহনের একটি বাস চালু করা হয়। কিন্তু কুড়িগ্রাম বাস মালিক সমিতি কোনো প্রকার আলোচনা ছাড়াই জান্নাত পরিবহনের বাস কুড়িগ্রামে আটকে দেন। ওই ঘটনার প্রতিবাদে কুড়িগ্রাম বাস মালিক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দুটি কোচ পলাশবাড়ীতে আটকে রাখা হয়েছে। জান্নাত পরিবহনের গাড়ি চলাচলে বাধা না দিলে তাদের কোচ ছেড়ে দেওয়া হবে।