রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্রলীগের বাগড়া

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আট ছাত্রসংগঠনের কর্মসূচিতে ‘বিতর্কিত’ স্লোগান দিতে নিষেধ করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। আজ সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ হয়েছে। আজ সোমবার ক্যাম্পাসের আটটি ছাত্রসংগঠনের নেতা–কর্মীরা এই কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় তাঁরা শেখ হাসিনা ও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন। তখন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজন নেতা–কর্মী এসে ওই স্লোগান দিতে নিষেধ করেন।

বেলা একটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটের আমতলা চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়। পরে এটি ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়৷ পরে সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তাঁরা। সমাবেশ শুরুর আগেই ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা এসে শেখ হাসিনা ও ছাত্রলীগবিরোধী স্লোগান দিতে নিষেধ করেন।

বিক্ষোভ মিছিলে তাঁরা ‘জাবিতে ধর্ষক কেন, শেখ হাসিনা জবাব চাই’, ‘ধর্ষক তৈরির কারখানা জ্বালিয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও’, ‘শিক্ষা-ছাত্রলীগ, একসাথে চলে না’, ‘আমার বোন ধর্ষণ কেন, শেখ হাসিনা জবাব চাই’, ‘ছাত্রলীগের কালো হাত, জ্বালিয়ে দাও পুড়িয়ে দাও’, ‘রুখে দিতে ধর্ষণ, রাবি করো গর্জন’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।

আরও পড়ুন

সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি শাকিল হোসেন বলেন, ধর্ষক উৎপাদনের প্রধান কারণ বিচার না হওয়া। বিচার না হওয়ার কারণে তারা পার পেয়ে যাচ্ছে। ফলে তারা বারবার সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে যাচ্ছে। বিচার বিভাগকেও আয়ত্তে নিয়ে আসছে তারা। এ ক্ষেত্রে বিচার বিভাগকে আলাদা করতে হবে। দেশে গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে এনে নতুন বাংলাদেশ গড়তে হবে।

ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি রায়হান আলী বলেন, ‘সরকারপ্রধানকে প্রশ্নের মুখোমুখি করা যাবে না, এটা কোন দেশে আছে? “শেখ হাসিনার কাছে জবাব চাই”—এমন স্লোগান নাকি দেওয়া যাবে না। ২০২০ সালে সিলেটের এমসি কলেজে ধর্ষণের মতো ঘটনায় একজনেরও বিচার হয়নি। এদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের নেতা–কর্মীরাই জড়িত। এসব ব্যাপারে প্রতিবাদ করলেই আমাদের বাধা দেওয়া হয়।’

স্লোগান দিতে নিষেধ করার ব্যাপারে জানতে চাইলে নাগরিক ছাত্র ঐক্যের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মেহেদী হাসান প্রথম আলোকে বলেন, বিক্ষোভ মিছিলের পর সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার আগে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবসহ কয়েকজন এসে সরকার ও ছাত্রলীগবিরোধী মিছিল করতে নিষেধ করেন। যে দেশে গণতন্ত্রের সুষ্ঠু পরিবেশ নেই, সে দেশে তো বাধা দেবেনই তাঁরা। এ ব্যাপারে তাদের লাইসেন্সও আছে। ক্ষমতাসীন সরকারের কাছ থেকেই এই অধিকার পেয়েছে তাঁরা।’

তবে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব বলেন, ‘বাম ছাত্রসংগঠনের নেতা–কর্মীরা শেখ হাসিনা ও ছাত্রলীগকে নিয়ে বিতর্কিত স্লোগান দিচ্ছিলেন। সেখানে তাঁদের এসব স্লোগান দিতে নিষেধ করেছি। কোনো ধরনের বাধা দেওয়া হয়নি। শেখ হাসিনা ও ছাত্রলীগের বিষয়ে আমরা আপসহীন। ব্যক্তির দায় কখনো সংগঠন নেবে না। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের যেসব নেতা-কর্মী ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত, তাঁদের ইতিমধ্যে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।’

আরও পড়ুন

উল্লেখ্য, ধর্ষণের ঘটনায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান ছয় শিক্ষার্থীর সনদ স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর মধ্যে তিনজনই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা। এ ছাড়া তিন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। দুজনকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।