গরমে দ্রুত পেকে যাচ্ছে সব আম, ঈদের জন্য ‘মানুষ খাচ্ছে কম’

প্রচণ্ড গরম আর রোদে আম দ্রুত পেকে যাচ্ছে। হাটে প্রচুর আম উঠলেও খুব বেশি ক্রেতা নেই। গতকাল সোমবার বিকেলে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর হাটেছবি: প্রথম আলো

রাজশাহীতে আমের সবচেয়ে বড় হাট বসে পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে। ঈদের পর এই হাটের আমের বাজার বসানো হয়েছে একটি কলেজ মাঠে। গতকাল সোমবার বিকেলে হাটে ঢুকতেই দেখা গেল, একজন আম বিক্রেতা মুঠোফোনে অপর প্রান্তের ব্যক্তিকে বলছেন, ‘তরে কইছিলাম না যে আম নামাবি না। এখন বাজারে তো দাম কয় না।’

ফোন রাখার পর আলাপে জানা গেল তাঁর নাম মনজুর মিয়া। আমের বাজার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়েক বছরের মধ্যে আজকের (সোমবার) আমের বাজার সবচেয়ে কম। ক্ষীরশাপাতির (হিমসাগর) দামই বলে না ক্রেতারা। ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা মণ। গত বছর এই দিনে এই আম আড়াই হাজার টাকাতেও পাওয়া যায়নি। ঈদের আগেও ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা মণ বিক্রি হয়েছে। এখন আম না পেড়ে উপায় ছিল না। দুই বিঘা আয়তনের বাগানের আম কিনেছেন। সব আম পেকে পড়ে যাচ্ছে।

সোমবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বানেশ্বর হাটে মনজুর মিয়ার মতো বেশ কয়েকজন আম বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, এবার রাজশাহীতে আমের জন্য উপযুক্ত আবহাওয়া ছিল। মুকুলও বেশি ছিল। মুকুল থেকে আমের গুটিও হয়েছিল বেশি। এবার তাই অন্যবারের চেয়ে আমের ফলন ভালো। এ বছর আমের মৌসুমে পড়ে গেছে কোরবানির ঈদ। গত বছরও পড়েছিল। তবে আম কম ছিল। প্রচণ্ড রোদ আর গরম থাকায় ঈদের আগে-পরে সব আম পরিপক্ব হয়ে গেছে। একসঙ্গে আম পাকতে শুরু করায় সবাই আম পাড়তে শুরু করেছেন। অন্যদিকে ক্রেতাও নেই। এ কারণে আমের বাজারে ধস নেমেছে।

১৫ ক্রেটে ৭ মণের মতো আম নিয়ে এসেছিলেন মো. রাসেল। তাঁর আনা হিমসাগরের আকার কিছুটা ছোট। তিনি এক হাজার টাকা মণে বিক্রি করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ঈদের কারণে হাটে ক্রেতা, পাইকার নেই। গাছে আম রাখা যাচ্ছে না। সব আম পেকে যাচ্ছে। এবার আম চাষে ক্ষতি গেল। গাছে আম রাখতে পারলে এক সপ্তাহ পর দাম পাওয়া যেত।

মো. জালাল নামের একজন বলেন, ‘এবার আমের দাম সর্বনিম্ন। আম লওয়ার লোক নেই। দাম বলছেই না। এবার সব ব্যবসায়ীর লস। ঈদের আগেও বাজার এত কম ছিল না। আজকে বারো শ টাকা মণ হিমসাগর আম। আর ল্যাংড়া আমের দাম বলে এগারো শ টাকা। এই দামে বিক্রি করলে সার, ওষুধ, শ্রমিকের দামই উঠবে না।’

আম নিয়ে চলছে ক্রেতা–বিক্রেতার দর–কষাকষি। সোমবার বিকেলে রাজশাহীর বানেশ্বরে আমের হাটে
ছবি: প্রথম আলো

হাট ঘুরে দেখা গেল, প্রচুর আম এসেছে। বিপরীতে হাটে আম কেনার লোক কম। হাটে বর্তমানে হিমসাগর, ল্যাংড়া, লক্ষ্মণভোগ পাওয়া যাচ্ছে। দুই জায়গাতে আম্রপালিও পাওয়া গেছে।

এই বাজার থেকে আম কিনে টাঙ্গাইলে বিক্রি করেন রাজেদুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘ঈদের লেইগ্যা মানুষ খাচ্ছে কম। ঈদের গোশ খাবে না আম খাবে। আমও পাকার সময় হয়ে গেছে, ক্রেতাও কমেছে। এখন আম কেনাও রিস্ক।’

আরও পড়ুন

রাজশাহী এখন সর্বত্র আমময়। রাস্তার পাশেও আম বিক্রি হচ্ছে। গরমে আম পেকে যাওয়ায় রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কের কাপাসিয়া এলাকায় দেখা গেল দুই শিশু পাকা আম ডেকে ডেকে বিক্রি করছে। তারা বলে, আমগুলো পেকে যাচ্ছে। তাদের কারও বাবা কারও মামা আমগুলো রাস্তার পাশে বিক্রি করতে দিয়েছেন।

পাকা আম বিক্রির জন্য মহাসড়কের পাশে বসেছে শিশুরা। সোমবার বিকেলে রাজশাহীর পবা উপজেলার কাপাসিয়ার রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কে
ছবি: শফিকুল ইসলাম

বাজারে আমভেদে হিমসাগর ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৪০০, ল্যাংড়া ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৬০০, আম্রপালি ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৭০০, লক্ষ্মণভোগ ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে ল্যাংড়া আগামীকাল থেকে ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বাজারে আসার কথা। আর আম্রপালি আসার কথা ১৫ জুন। ঈদের আগে বাজারে ছিল গোপালভোগ। সেটি বর্তমানে শেষ হয়ে গেছে। এই আম মণপ্রতি বিক্রি হয়েছিল সর্বোচ্চ ২ হাজার ৪০০ টাকা। ক্ষীরশাপাতি মণপ্রতি বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়। ল্যাংড়া বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। এ ছাড়া লক্ষ্মণভোগ আম বিক্রি হয়েছে ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত।

আরও পড়ুন

রাজশাহীতে এবার ঘোষিত ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, গুটি আম ১৫ মে থেকে বাজারজাত করা হয়। ২২ মে থেকে গোপালভোগ, ২৫ মে থেকে রানিপছন্দ ও লক্ষ্মণভোগ, ৩০ মে থেকে হিমসাগর বা ক্ষীরশাপাতি, ১০ জুন থেকে ব্যানানা ম্যাঙ্গো ও ল্যাংড়া, ১৫ জুন থেকে আম্রপালি ও ফজলি, ৫ জুলাই থেকে বারি আম-৪, ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা, ১৫ জুলাই থেকে গৌড়মতী সংগ্রহ করা যাবে। এ ছাড়া কাটিমন ও বারি আম-১১ সারা বছরই পাকা সাপেক্ষ পাড়া যাবে। এবার রাজশাহী জেলায় ১৯ হাজার ৬০৩ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন।

এবারে আমের দাম কমের ব্যাপারে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোছা. উম্মে ছালমা প্রথম আলোকে বলেন, চলতি বছর গাছে আমের মুকুল বেশি ধরেছিল। অনুকূল পরিবেশ থাকায় আম উৎপাদন বেশি হয়েছে। এ কারণে অন্যবারের তুলনায় আমের দাম কিছুটা কম।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন