দাখিল পাস শিক্ষার্থীদের না জানিয়েই আলিমে ভর্তির আবেদন করল মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ

নরসিংদী জেলার মানচিত্র

নরসিংদীর রায়পুরার একটি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ দাখিল পরীক্ষায় কৃতকার্য সব শিক্ষার্থীর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আলিম শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন করেছে। মাদ্রাসাটির কৃতকার্য শিক্ষার্থীরা অনলাইনে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন করতে গিয়ে ব্যর্থ হলে বিষয়টি জানাজানি হয়। প্রতিবছরই মাদ্রাসাটিতে দাখিল পরীক্ষায় কৃতকার্য শিক্ষার্থীদের এভাবে জোর করে আলিমে ভর্তি করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির নাম করিমগঞ্জ দারুল উলুম আলিম মাদ্রাসা। এর অবস্থান রায়পুরা উপজেলার আমিরগঞ্জ ইউনিয়নের করিমগঞ্জ গ্রামে। মো. আলী আকবর নামের এক ব্যক্তি ১৯৮৫ সালে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন।

ক্ষুব্ধ দুই শিক্ষার্থীর অভিযোগ, চলতি বছর মাদ্রাসাটি থেকে দাখিল পরীক্ষায় ৩১ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে ২৬ জন কৃতকার্য হয়। এর অধিকাংশই মাদ্রাসাটির আলিম শ্রেণিতে ভর্তি না হয়ে উচ্চমাধ্যমিকে পড়ার স্বপ্ন দেখছিল। গত বৃহস্পতিবার সকালে তারা দুজন নরসিংদী সরকারি কলেজসংলগ্ন একটি দোকানে অনলাইনে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন করতে যায়। ওই সময় সব তথ্য পূরণ করে আবেদন করার পরও তা সাবমিট (জমা) হচ্ছিল না। প্রতিবারই কম্পিউটারের পর্দায় ‘অলরেডি সাবমিশন কমপ্লিট’ (ইতিমধ্যে আবেদন করা হয়েছে) লেখা আসছিল।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষার্থীরা বলে, ঘটনাটি ওই মাদ্রাসার একজন শিক্ষককে জানানো হলে তিনি নিশ্চিত করেন, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে এ বছর কৃতকার্য ২৬ জনেরই আবেদন করে ফেলা হয়েছে। এ কারণেই তারা আর আবেদন করতে পারছে না। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ যে তাদের সবার ভর্তি আবেদন করে ফেলেছে, বিষয়টি একজন শিক্ষার্থীকেও জানানো হয়নি। উল্টো মাদ্রাসার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা যে অন্য কোথাও ভর্তির আবেদন করবে, তা আগে কেন জানানো হয়নি। প্রতিবছরই দাখিল পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এমনটা করে আসছে ওই মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।

অভিযোগের বিষয়ে মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদীন প্রথম আলোকে বলেন, দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার আগেই শিক্ষার্থীরা নিশ্চিত করেছিল, কৃতকার্য হলে তারা এই মাদ্রাসাতেই আলিম শ্রেণিতে পড়বে। এ কারণেই গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে অনলাইনে ভর্তি আবেদন শুরু হওয়ার পরই তাদের সবার আবেদন করে দিয়েছেন। এরপরও যদি দু-একজন অন্য কোথাও ভর্তি হতে চায়, তাহলে তাদের আবেদন নিশ্চায়ন করবেন না।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সামালগীর আলম জানান, অনলাইনে ভর্তির আবেদনটি শিক্ষার্থীদের নিজেদের করার কথা। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ যদি এমন কাজ করে থাকে, এটি অবশ্যই অন্যায়। যদি শিক্ষার্থীরা নিজেরাই সেখানে পড়তে চায়, তাহলে ভিন্ন বিষয়। এ বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রায়পুরার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসগর হোসেন জানান, ‘কৃতকার্য শিক্ষার্থীরা কোথায় ভর্তির আবেদন করবে, তা নিয়ে নাক গলানোর কোনো সুযোগই মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের নেই। যদি এই ঘটনা সত্য হয়ে থাকে, তবে ওই মাদ্রাসার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভুক্তভোগী প্রতিটি শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে তাদের কীভাবে সহযোগিতা করা যায়, সেটিও দেখা হবে।’