কেউ খোঁজ নেয় না—বললেন অবসরে যাওয়া শিক্ষকেরা

‘জীবনের বেশির ভাগ সময় শিক্ষকতা করেছি। শিক্ষার্থীদের অনেকেই ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হয়েছেন। তাঁরা সবাই দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করছেন। প্রায় ২০ বছর হলো শিক্ষকতার মতো মহান পেশা থেকে অবসর নিয়েছি। অবসরজীবনে কেমন আছি, পরিবার–পরিজন কেমন আছে, কীভাবে সময় কাটছে—কেউ কোনো দিন খোঁজ নেয় না।’

কথাগুলো বলছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোহাম্মদ আলী মোড়ল। কথা বলতে বলতে অনেকটা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। মোহাম্মদ আলী মোড়লের মতো অবসরে যাওয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৭০ জন শিক্ষককে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। ২০০৫ সাল থেকে চলতি বছরের মধ্যে তাঁরা অবসরে গিয়েছেন।

অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নিয়ে ভিন্নধর্মী এই বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে খুলনার পাইকগাছা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা পরিবার। গতকাল সোমবার দুপুরে উপজেলা পরিষদ মাঠে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে শিক্ষকদের পাশাপাশি একজন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের একজন কর্মচারীকেও সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

সংবর্ধনায় খুশি শিক্ষকেরাও। ওই আয়োজনের জন্য তাঁরা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় ও শিক্ষা পরিবারের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। যে কদিন বেঁচে থাকবেন, এই মুহূর্ত চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে বলেও মন্তব্য করেন তাঁরা।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন প্রসঙ্গে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুজ্জামান বলেন, এর আগে কখনো এমন আয়োজন করে শিক্ষকদের বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়নি। অবসরে যাওয়া শিক্ষকদের অনেকেই মারা গেছেন, অনেকেই রোগাক্রান্ত হয়ে চলাচলে অক্ষম হয়ে পড়েছেন। যাঁরা জীবিত আছেন, তাঁরা জীবনের শেষ সময়ে এমন একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পেরে খুবই খুশি হয়েছেন।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম। প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার ইকবাল। স্বাগত বক্তব্য দেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিদ্যুৎ রঞ্জন সাহা। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শিয়াবুদ্দীন ফিরোজ, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান লিপিকা ঢালী, ইউআরসি ইনস্ট্রাক্টর ঈমান উদ্দীন, সাবেক উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা খান মো. আলমগীর। মানপত্র পাঠ করেন শিক্ষক দীপক কুমার মণ্ডল। বক্তব্য দেন উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মীর্জা মিজানুর আলম, শেখ ফারুক হোসেন, আলমগীর হোসেন, দেবাশীষ দাশ, আছাদুজ্জামান, ঝংকার ঢালী, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি রবীন্দ্রনাথ, সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান, সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি বি এম আক্তার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক এস কে আসাদুল্লাহ প্রমুখ।