নরসিংদীতে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ ১৬

নরসিংদীর প্রত্যন্ত চরাঞ্চল আলোকবালী ইউনিয়নে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ দুজন ব্যক্তি
ছবি: প্রথম আলো

নরসিংদী সদর উপজেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চল আলোকবালী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৬ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ সময় ১৫ থেকে ২০টি বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়েছে। বুধবার ভোর পাঁচটার দিকে ইউনিয়নের বাখরনগর, মুরাদনগর ও বকশালীপুর গ্রামে দফায় দফায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, আলোকবালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আসাদ উল্লাহ পক্ষের সঙ্গে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি দেলোয়ার হোসেনের সমর্থকদের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ ১৬ জনকে নরসিংদী সদর হাসপাতাল, ১০০ শয্যাবিশিষ্ট নরসিংদী জেলা হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

গুলিবিদ্ধ ১৬ জন হলেন দেলোয়ার হোসেন পক্ষের মনির উদ্দিন (৫৩), বজলুর রহমান (৪৫), আবদুর রহমান (২২), মাহফুজ মিয়া (২০), শীতল মিয়া (৫০), খোকা মিয়া (৬৫), সজিব মিয়া (২৫), মুরাদ মিয়া (২২), আল মাসুদ (১৮) ও ওবায়দুল মিয়া (২৬) এবং আসাদ উল্লাহ পক্ষের রমজান মিয়া (২৫), মোজাম্মেল হক (১৮), আমজাদ মিয়া (২০), সাইফুল ইসলাম (১৭), মামুন মিয়া (১৬) ও মোমেন মিয়া (৪৬)।

দুই পক্ষের কর্মী-সমর্থক ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আসাদ উল্লাহর সঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি দেলোয়ার হোসেনের বিরোধ দীর্ঘদিনের। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নরসিংদী-১ (সদর) আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের (নৌকা প্রতীক) পক্ষে দেলোয়ার হোসেন কাজ করেন। আর আসাদ উল্লাহ কাজ করেন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুজ্জামানের (ঈগল প্রতীক) পক্ষে। মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি। তিনি ভোটে বিজয়ী হয়ে এ নিয়ে টানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। অপর দিকে নরসিংদী পৌরসভার সাবেক মেয়র কামরুজ্জামান জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

এ নিয়ে সৃষ্ট বিরোধে দফায় দফায় দুই গ্রুপের মধ্যে বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ হলে দেলোয়ারের লোকজন আসাদ উল্লাহ গ্রুপের বেশ কিছু সমর্থককে এলাকাছাড়া করেন।

নরসিংদীর চরাঞ্চল আলোকবালী ইউনিয়নে সংঘর্ষের সময় ভাঙচুর করা বাড়িঘর। বুধবার সকালে
ছবি: প্রথম আলো

বুধবার ভোর পাঁচটার দিকে আসাদ উল্লাহ পক্ষের এলাকাছাড়া লোকজন বাখরনগর গ্রামে প্রবেশ করতে চাইলে দেলোয়ারের লোকজন বাধা দেন। এই সময় উভয় গ্রুপের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে গোলাগুলি শুরু করেন। কাছাকাছি সময়ে ইউনিয়নের মুরাদনগর ও বকশালীপুর গ্রামেও এলাকাছাড়া লোকজন প্রবেশের সময় দেলোয়ারের সমর্থকেরা বাধা দিলে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। একযোগে তিন গ্রামে সংঘর্ষ চলাকালে উভয় পক্ষের অন্তত ১৬ জন শটগানের গুলিতে আহত হন। এ ছাড়া এলাকাছাড়া লোকজনের ১৫ থেকে ২০টি বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ ওঠে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মাহামুদুল কবির বাশার বলেন, ‘আলোকবালীর ঘটনায় গুলিবিদ্ধ ছয়জন আমাদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁদের সবার শরীরে ছররা গুলি লেগেছে। তাঁদের মধ্যে তিনজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।’

আলোকবালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আসাদ উল্লাহ বলেন, ‘ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দল বেঁধে আমাদের লোকজনের ওপর হামলা চালিয়ে ছয়জনকে গুলি করে আহত করেছেন। আমাদের ১৫ থেকে ২০টি বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছেন। আমরা সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুজ্জামানের নির্বাচন করেছিলাম। নির্বাচনের দিনই ২০ জনকে এলাকাছাড়া করেন তাঁরা।’

এ ঘটনায় বক্তব্য জানতে ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি কল না ধরায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর গ্রুপের নেতা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোমেন মিয়া বলেন, ‘আসাদ উল্লাহর লোকজন রাতের আঁধারে আমাদের ওপর হামলা চালান। তাঁর অত্যাচার থেকে বাঁচতে সাধারণ লোকজন তাঁদের প্রতিহত করে এলাকা থেকে বের করে দিয়েছিলেন। আজ তাঁরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এলাকায় ঢুকে হামলা চালান। আমরা বাধা দিলে আমাদের ১০ জন গুলিবিদ্ধ হন।’

এ বিষয়ে নরসিংদী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীর আহমেদ বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। এ ঘটনায় কোনো পক্ষ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। কাউকে আটকও করা যায়নি। ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।