ডিমের খোসা থেকে সার বানিয়ে লাভের মুখ দেখেছেন বেলাল
জয়পুরহাট সদর উপজেলার ভিটি গ্রামের বাসিন্দা বেলাল মোল্লা (৪৩)। কখনো মুরগির ব্যবসা করেছেন, আবার কখনো হ্যাচারির বর্জ্য পরিষ্কারের কাজ করেছেন। তখন হ্যাচারিতে জমে থাকা ডিমের খোসার দিকে নজর পড়ে। সেই খোসাই একদিন তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
প্রথম দিকে সামান্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে হ্যাচারি থেকে ডিমের খোসা পরিষ্কার করে বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেওয়ার কাজ করতেন বেলাল। একসময় জানতে পারেন, ডিমের খোসায় প্রচুর ক্যালসিয়াম আছে, যা মাটির উর্বরতা বাড়ায়। তখনই তাঁর মাথায় আসে ডিমের খোসাকে জৈব সারে রূপান্তরের ভাবনা।
কিন্তু বেলালের কাছে পুঁজি ছিল না। গত বছরের শুরুর দিকে ঋণ নিয়ে ছোট একটি মেশিন কেনেন। শুরু হয় ডিমের খোসা শুকানো ও গুঁড়া করার কাজ। প্রথম দিকে অনেকে হাসাহাসি করলেও তিনি দমে যাননি। বছর ঘুরতেই বেলালের সেই ছোট উদ্যোগ এখন বড় আকার নিয়েছে। ডিমের খোসার কারখানার উপার্জন দিয়ে নিজের সংসার যেমন চালাচ্ছেন, তেমনি পাঁচ কর্মচারীরও জীবিকা নির্বাহ হচ্ছে।
বেলাল জানান, প্রতিদিন হ্যাচারির খোসা সংগ্রহ করে তা শুকিয়ে পাউডার বানানো হয়। এই পাউডার জৈব সার হিসেবে নার্সারি ও সবজিখেতে ব্যবহার করা হচ্ছে। মাছের খাবার হিসেবেও অনেকে কেনেন। স্থানীয় বাজারে এর চাহিদা বেড়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন জেলায় ডিমের খোসার পাউডার যাচ্ছে। ৫০ কেজির এক বস্তা পাউডার বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায়। উৎপাদন, পরিবহন ও কর্মচারীদের বেতন বাবদ খরচ বাদে মাসে তাঁর ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা থাকে।
ডিমের খোসার কারখানার মেশিনচালক আবদুল মোমিন বলেন, ‘প্রতি মাসে এখান থেকে যে বেতন পাই, তাতে আমার সংসার ভালোভাবে চলে যায়।’
স্থানীয় কৃষক আবদুল মালেক বলেন, ‘আমরা সবজিখেতে ডিমের খোসার সার ব্যবহার করছি। ফলন ভালো হচ্ছে। মাটির কোনো ক্ষতি নেই। রাসায়নিক সারের মতো ঝুঁকিও নেই।’
বেলাল স্বপ্ন দেখেন, একদিন তাঁর উৎপাদিত সার সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে এবং আরও মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ডিমের খোসায় ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও সালফার থাকে, যা ফসলের গুণগত মান বাড়ায়। এটি মাছ, পোলট্রি খাদ্য ও সবজিখেতে জৈব সার হিসেবে কার্যকর। তবে বাজারজাত করতে হলে অবশ্যই কৃষি বিভাগের লাইসেন্স নিতে হবে।