২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

চার দিন পর খুলেছে ডিমের আড়ত, বেঁধে দেওয়া দামে হচ্ছে না বিক্রি

ডিমের আড়ত থেকে ডিম কিনে ভ্যানে তুলছেন এক ক্রেতা। আজ সকালে চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলী বাজারেজুয়েল শীল।

চট্টগ্রামের আড়তে চার দিন বেচাকেনা বন্ধ থাকার পর আবারও ডিম বিক্রি শুরু করেছেন আড়তদারেরা। আজ বুধবার সকাল থেকে পাহাড়তলী বাজারের আড়তে পাইকারি পর্যায়ে ডিম বিক্রি শুরু হয়েছে। এর আগে সরকারি দামে কেনাবেচা করতে না পারায় ও প্রশাসনের অভিযানের কারণে ব্যবসায়ীরা গত শনিবার থেকে ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছিলেন।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রশাসনের হয়রানি না করার আশ্বাস পেয়ে ডিম বিক্রি শুরু করেছেন তাঁরা। পাশাপাশি খামারে এখনো দাম বাড়তি থাকায় তাঁরা সরকারের বেঁধে দেওয়া দরে ডিম বিক্রি করতে পারছেন না । ১২ টাকা ৮০ পয়সা দরেই পাইকারিতে প্রতিটি ডিম বিক্রি হচ্ছে। খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ১৪ থেকে ১৫ টাকায়।

চট্টগ্রাম নগরে ডিমের পুরো সরবরাহ নির্ভর করে পাহাড়তলী পাইকারি বাজারের ওপর। ছোট–বড় মিলিয়ে প্রায় ৫০টি ডিমের আড়ত ও পাইকারি দোকান রয়েছে এখানে। প্রতিদিন ২০ লাখ থেকে ২৫ লাখ ডিম বিক্রি হয় এই বাজারে। তবে শনিবার থেকে এই বাজারের প্রায় প্রতিটি আড়তে কেনাবেচা বন্ধ ছিল। ব্যবসায়ীরা বলছেন, জেলা প্রশাসনের আশ্বাসে তাঁরা আড়ত খুলেছেন।

আড়তদারেরা জানান, সরকারি দামে ডিম কিনতে না পারা এবং প্রশাসনের অভিযানে জরিমানার কারণে ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছেন তাঁরা। দেড় মাস ধরে তাঁদের ডিম কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। তবে সরকার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে আরও কম। ফলে লোকসান গুনে বিক্রি করতে হচ্ছে। এর ওপর প্রশাসনের অভিযানের কারণে আরও লোকসান গুনতে হচ্ছে। তাই তাঁরা বিক্রি বন্ধ করে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

সরেজমিনে আজ সকালে পাহাড়তলী ডিমের আড়ত ঘুরে দেখা যায়, আজ সকাল থেকে বাজারে আড়ত খুলতে শুরু করেছে। দুপুর ১২টার দিকে বাজারে ১০ থেকে ১৫টি আড়তে ব্যস্ততা দেখা গেছে। আড়তদারেরা বলছেন, আড়ত খুললেও সরকারি দামে ডিম বিক্রি এখনই সম্ভব নয়। কারণ, খামার পর্যায়ে এখনো ডিমের দাম সাড়ে ১২ টাকার বেশি। তাই আড়তে ১২ টাকা ৮০ পয়সা দরে ডিম বিক্রি হচ্ছে।

চট্টগ্রামে ডিম সরবরাহ হয় মূলত টাঙ্গাইল, রাজশাহী, কিশোরগঞ্জ, কুমিল্লা, নোয়াখালী, কাপাসিয়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে। এর মধ্যে পাহাড়তলী বাজারে বড় অংশ সরবরাহ হয় কুমিল্লা ও নোয়াখালী থেকে। একে ‘লেয়ার বেল্ট’ হিসেবে বলছেন আড়তদারেরা। সম্প্রতি বন্যার কারণে এই এলাকার খামারগুলো তলিয়ে গেছে। এর পর থেকেই চট্টগ্রামের বাজারে ডিমের সংকট দেখা দিয়েছে।

সব শেষ গতকাল মুরগির ডিমের নতুন দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। বেঁধে দেওয়া দাম অনুসারে, উৎপাদক পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের মূল্য ১০ টাকা ৯১ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১১ টাকা ১০ পয়সা ও খুচরা পর্যায়ে তা ১১ টাকা ৮৭ পয়সা হওয়ার কথা। তবে আড়তদারেরা বলছেন, খামারিদের কাছ থেকেই ১২ টাকা ৫০ পয়সা দরে ডিম কিনতে হচ্ছে। আজ খুচরা বাজারে প্রতিটি ডিম ১৪ থেকে ১৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

গত ৫ বছরের তথ্যে দেখা যায়, ২০২০ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে ডিমের দাম বেশি ছিল বছরের অন্য মাসের তুলনায়। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে প্রতিটি ডিমের দাম ছিল ১০ টাকার আশপাশে। তবে আগস্ট থেকে অক্টোবর তিন মাসে গড়ে দাম ছিল ১৩ টাকার মতো। এ বছরের জানুয়ারি মাসে দাম ছিল ১০ টাকার আশপাশে। এরপর গত দুই মাসে বেড়ে ১৩ টাকা হয়। চলতি মাসে এই দাম ১৪ টাকা ছাড়িয়েছে।

চট্টগ্রাম ডিম ব্যবসায়ী আড়তদার সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল শুক্কুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রশাসন আমাদের হয়রানি করবে না বলে আশ্বাস দিয়েছে। তাই আজ আড়ত খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সরকারি দরে ডিম বিক্রি এখনই সম্ভব নয়। তবে সামনের মাসে ডিমের দাম কমে যাবে।’