আওয়ামী লীগের সমাবেশের লোক আনতে বাস ‘রিজার্ভ’, টার্মিনালে বাস নেই
খুলনার জিরো পয়েন্ট এলাকায় দুটি ব্যাগ ও বড় তিনটি বস্তা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন শারমিন সুলতানা। সঙ্গে তিন বছর বয়সী তাঁর সন্তান। এই নারী বটিয়াঘাটা উপজেলার জলমা ইউনিয়নের সাচিবুনিয়া এলাকায় ভাড়া থাকতেন। বাসাটি ছেড়ে দিয়ে সবকিছু নিয়ে তিনি সাতক্ষীরার শ্যামনগরে যাওয়ার উদ্দেশে বেরিয়েছেন। কিন্তু জিরো পয়েন্টে এসে দেখেন, কোনো বাস নেই। দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে দাঁড়িয়েও কোনো পরিবহন না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন তিনি।
শারমিন সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাস চলাচল একেবারেই যে বন্ধ থাকবে তা জানা ছিল না। শুনেছি অবরোধের মধ্যেও নিয়মিত বাস চলাচল করেছে। এ কারণে সকাল সাতটার দিকে বাড়ি থেকে সবকিছু নিয়ে বের হয়েছি। ভ্যানে করে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত এসে দেখি কোনো বাস নেই। সিএনজি বা অন্য কোনো যানবাহনও চলছে না। শুধু চলছে ইজিবাইক। খুলনা থেকে সাতক্ষীরা পর্যন্ত বাসে ভাড়া ৮০ টাকা। সেখানে ইজিবাইকে ভাড়া চাইছে ৪০০ টাকা। আমার কাছে আছে ৩০০ টাকা। এখন কী করব, সে চিন্তা করছি।’ তিনি বলেন, ‘বাড়িওয়ালাকে সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে এসেছি। তিনি ঘরে তালা মেরে অন্য জায়গায় চলে গেছেন। এখন যে আবার বাসায় ফিরে যাব সে উপায়ও নেই।’
আজ সকাল নয়টার দিকে জিরো পয়েন্ট এলাকায় কথা হয় শারমিন সুলতানার সঙ্গে। সেখানে তাঁর মতো এমন বিপদে পড়েছেন আরও অনেকেই। তাঁদের মধ্যে অনেকেই বেরিয়েছেন জরুরি কাজে। কিন্তু বাস না পেয়ে হতাশ হচ্ছেন। দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে ইজিবাইকে করে গন্তব্যের উদ্দেশে যাচ্ছেন তাঁরা।
বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন আলী আকবর। জরুরি প্রয়োজনে খুলনা থেকে চুকনগরে যাওয়ার জন্য বাহন খুঁজছিলেন তিনি। এ সময় কথা হলে আলী আকবর বলেন, ‘হরতাল বা অবরোধের মধ্যেও নিয়মিত বাস, সিএনজি থেকে শুরু করে সব ধরনের যানবাহনই চলাচল করেছে। কিন্তু আজ কিছুই চলছে না। এটা খুবই বিস্ময়কর ব্যাপার। শুধু ইজিবাইক চলছে কিন্তু ভাড়া চাইছে দ্বিগুণেরও বেশি।’
সোনাডাঙ্গা আন্তজেলা বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, ধু ধু করছে টার্মিনাল চত্বর। হাতে গোনা কয়েকটি বাস ছাড়া সেখানে কোনো বাস নেই। ওই টার্মিনাল থেকে খুলনার বিভিন্ন উপজেলা ও আশপাশের জেলার ১৮টি রুটের বাস চলাচল করে। সেখানে কোনো হাঁকডাক নেই। নেই ব্যস্ততাও। দু-একজন পরিবহন শ্রমিক এখানে সেখানে ঘোরাফেরা করছিলেন। তাঁরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খুলনা সফর ঘিরে আওয়ামী লীগের সমাবেশ উপলক্ষে সব বাস রিজার্ভ করে নেওয়া হয়েছে। গতকাল রোববার বিকেলেই বাসগুলো চলে গেছে নিজ নিজ গন্তব্যে। এ কারণে টার্মিনাল একেবারে ফাঁকা। বাসগুলো যখন সমাবেশে আসা লোকজনকে নিয়ে খুলনায় প্রবেশ করবে, তখন যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে আবার টার্মিনালে রাখা হবে।
জানতে চাইলে খুলনা জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সব বাস রিজার্ভ হয়ে গেছে। এ কারণে কোনো রুটে বাস চলাচল করছে না।
আজ সোমবার খুলনায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি তাঁর রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক সফর। প্রথমার্ধে খুলনা বিভাগীয় ও জেলার শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। পরে বিকেল ৪টায় যোগ দেবেন সার্কিট হাউস মাঠে অনুষ্ঠিত জনসভায়। জনসভা সফল করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে খুলনা জেলা প্রশাসন ও আওয়ামী লীগ। সমাবেশে খুলনা বিভাগের ১০ জেলা ছাড়াও পদ্মার এপারের অন্তত ১০ লাখ মানুষের সমাগম করার পরিকল্পনা নিয়েছে আওয়ামী লীগ। সমাবেশ উপলক্ষে পুরো খুলনা শহরকে ঢেকে ফেলা হয়েছে নিরাপত্তার চাঁদরে। সমাবেশে মানুষকে দূরদূরান্ত থেকে নিয়ে আসতে ভাড়া করা হয়েছে সব বাস। এ কারণে নির্ধারিত রুটে কোনো বাস চলাচল করছে না।
আজ সকাল থেকে নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নগরে প্রবেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তল্লাশিচৌকি বসানো হয়েছে। কোনো যানবাহনই সেখান দিয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এ কারণে মানুষ হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছেন। অল্প কিছু ইজিবাইক চলাচল করলেও যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নিচ্ছেন দ্বিগুণেরও বেশি।