বেলাব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছাত্রলীগের ভাঙচুর

বেলাবতে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা–কর্মচারীদের মানববন্ধন। বুধবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

নরসিংদীর বেলাবতে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দল বেঁধে ভাঙচুর চালিয়েছেন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং তাঁদের অনুসারীরা। আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে এ ভাঙচুর চালানো হয়। ফলে দিনভর হাসপাতালটির চিকিৎসা-সংক্রান্ত সব সেবা কার্যক্রম বন্ধ ছিল।

নরসিংদীর সিভিল সার্জন নূরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালটিতে খাবার ও পথ্য সরবরাহের দরপত্র অন্য কেউ পেয়ে যাচ্ছেন, এমন খবরে এ হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অর্ধশতাধিক কর্মী হাসপাতালটিতে প্রবেশ করে হামলা-ভাঙচুর চালান। দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের হুমকি দেন। এ ঘটনায় বেলাব থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এ ঘটনার প্রতিবাদে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে মানববন্ধন করেছেন চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা–কর্মচারীরা।

অভিযুক্ত উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সারোয়ার হোসেন বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যেভাবে অভিযোগ করছে, এমন কোনো ঘটনা সেখানে ঘটেনি। আমি খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে জড়িত ব্যক্তিদের চড়থাপ্পড় মেরে বের করে দিয়েছি। এর বাইরে আমি কিছু জানি না।’ এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার তৌফিকের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

হাসপাতালে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেলা পৌনে ১১টার দিকে হঠাৎই দুই তরুণ হাসপাতালে ঢুকে প্রবেশমুখের সিসিটিভি ক্যামেরার তার কেটে দেন। এর মধ্যেই আরও কয়েকজন এসে আরও কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরার তার কেটে ফেলেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ৪০-৫০ জন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী হাসপাতালে আসেন। তাঁদের দেখে হাসপাতালের লোহার গেটটি তালাবদ্ধ করে দেওয়া হয়। পরে তাঁরা গেট ধাক্কাতে ধাক্কাতে বাঁকিয়ে দেন এবং ইট ছুড়ে গেটসংলগ্ন কাচের জানালা ভেঙে দেন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ও প্রশাসনের সদস্যরা হাসপাতালে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এর জের ধরে দিনভর হাসপাতালটিতে চিকিৎসা-সংক্রান্ত সব সেবা কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়।

বেলাব উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নূর আসাদোজ্জামান বলেন, ‘এই হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় আমি বাদী হয়ে বেলাব থানায় লিখিত একটি অভিযোগ দিয়েছি। এতে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতিসহ আটজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ৪০ জনকে আসামি করা হয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে নাম-পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরই তাঁদের অভিযুক্ত করা হয়েছে। দুপুরে থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়ে এলেও সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত সেটি মামলা হিসেবে নেওয়া হয়নি। কোনো আসামিও গ্রেপ্তার হননি।’

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের লিখিত অভিযোগটি পেয়েছেন জানিয়ে বেলাব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীর আহম্মেদ বলেন, এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৬ অক্টোবর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ খাদ্য ও পথ্য সরবরাহ-সংক্রান্ত দরপত্র আহ্বান করে। এতে অংশ নেন ছাত্রলীগের সভাপতি সারোয়ার হোসেনসহ একাধিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান। এসব দরপত্র বর্তমানে মূল্যায়ন কমিটির যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। দরপত্র অন্য কেউ পেয়ে যাচ্ছেন, এমন খবরে হাসপাতালে হামলা-ভাঙচুর চালান ছাত্রলীগের সভাপতি ও তাঁর কর্মীরা। অথচ মূল্যায়ন কমিটির যাচাই-বাছাই শেষে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে পাঠানোর পর নির্দিষ্ট হবে কোন ঠিকাদার এই টেন্ডার পাবেন। দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালটিতে খাদ্য ও পথ্য সরবরাহের কাজটি করে আসছিলেন নয়ন নামের এক ঠিকাদার।