ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়কে ৭ ইউটার্নের জায়গায় ১ ইউলুপ
নারায়ণগঞ্জ কারাগারে আসামি আনা-নেওয়া করতে হচ্ছে দুই কিলোমিটার ঘুরে। একই রকম ভোগান্তি দেখা দিয়েছে পথচারীদের।
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। চাষাঢ়া থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত এই সড়কের দৈর্ঘ্য আট কিলোমিটার। এর মধ্যে চাষাঢ়া থেকে শিবু মার্কেট পর্যন্ত দুই কিলোমিটার অংশে আগের সাতটি ইউটার্ন বন্ধ করে লেন পরিবর্তনের জন্য পর্যাপ্ত বিকল্প ব্যবস্থা না রাখার অভিযোগ উঠেছে।
বিকল্প হিসেবে নির্মাণ করা হচ্ছে একটি মাত্র ইউলুপ। এর ফলে নারায়ণগঞ্জ কারাগারে আসামি আনা–নেওয়া করতে হচ্ছে দুই কিলোমিটার ঘুরে। একই রকম ভোগান্তি দেখা দিয়েছে ১০টি গ্রামের বাসিন্দা এবং পথচারীদের।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইউটার্ন ছিল কারাগারের সামনের ইউটার্নটি। এটি বন্ধ করে দেওয়ায় কর অঞ্চল-৪ নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়, জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়, জেলা মৎস্য ভবন, দুর্নীতি দমনের আঞ্চলিক কার্যালয়ে যাতায়াতে ভোগান্তি বেড়েছে। কয়েক কিলোমিটার ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার প্রধান সড়কের যানবাহনগুলোকে। এই ইউটার্ন হয়ে সদর উপজেলার ইসদাইর, সস্তাপুর, দক্ষিণ সস্তাপুর, কোতালেরবাগ, কুতুবআইলসহ আশপাশের এলাকার প্রতিদিন শত শত যানবাহন চলাচল করত।
দক্ষিণ সস্তাপুর এলাকার বাসিন্দা নিজাম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ইউটার্নগুলো বন্ধ করে দেওয়ায় হাজার হাজার মানুষ ভোগান্তিতে পড়ছেন। এর সমাধান হওয়া উচিত। কারাগারে এক বন্দির সঙ্গে দেখা করতে আসা আবদুর রহিম বলেন, ইউটার্ন বন্ধ করে দেওয়ায় কয়েক কিলোমিটার এলাকা ঘুরে কারাগারে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এতে সময় লাগছে বেশি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আট কিলোমিটার সড়কটির ছয় লেন প্রকল্পে সব কটি ইউটার্নই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এসবের স্থলে তিনটি আন্ডারপাস করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি আন্ডারপাসও পড়েনি শিবু মার্কেট থেকে চাষাঢ়া পর্যন্ত দুই কিলোমিটার অংশে। এই অংশে নির্মাণ করা হচ্ছে একটি ইউলুপ। ইউলুপের একটি অংশ শহরের চানমারীতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে পড়েছে। অপর অংশ রয়েছে চানমারী ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে। কলেজের সামনে শেষ হওয়া ইউলুপটির অংশ কারাগার পর্যন্ত নিয়ে গেলে ভোগান্তি কিছুটা হলেও লাঘব হতো বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৩৬৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ চার লেন সংযোগ সড়ককে ছয় লেনে উন্নীতকরণের কাজ শুরু হয়। দুই দফা এই প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে ৪৪৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা হয়েছে এবং মেয়াদ বাড়িয়ে চলতি বছরের ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাজ শেষ হয়নি।
কারাগারের সামনের ইউটার্নটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে জানান নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের জেলার নাশির আহমেদ। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, সওজ ইউটার্ন বন্ধ করে দেওয়ায় কয়েক কিলোমিটার ঘুরে আসামি আনা–নেওয়া করতে হচ্ছে। এতে ঝুঁকি বেড়েছে। অসুস্থ বন্দিদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে সময় লাগছে। বন্দিদের স্বজনদেরও ভুগতে হচ্ছে। বিষয়টি সওজকে জানানো হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
কারাগারের সামনে ইউটার্ন না রাখার বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষের উদ্বেগের বিষয়টি নিয়ে অবগত আছেন বলে জানান জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, জাতীয় পরিকল্পনা অনুযায়ী সড়কের নকশা করা হয়েছে। আগে সড়কটি তৈরি করা হোক। কারাগারে চলাচলে সমস্যা হলে ভবিষ্যতে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছয় লেনের এই সড়কের মধ্যের চার লেন ব্যবহার করা হবে এক্সপ্রেসওয়ে হিসেবে। আর দুই পাশের দুই লেন দিয়ে চলবে আঞ্চলিক পরিবহন। সড়কটিতে ইউটার্নগুলো বন্ধ করে দেওয়ার ফলে ভোগান্তির বিষয় তুলে ধরা হয় প্রকল্প ব্যবস্থাপক এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌসের কাছে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, এক্সপ্রেসওয়েতে বেশি ইউলুপ বা ইউটার্ন রাখা যায় না।