‘আমার সব শ্যাষ করি দিছে’

কোম্পানীগঞ্জের শিমুলতলা গুচ্ছগ্রামের মো. মাসুক মিয়ার ঘরটি বন্যার পানির তোড়ে ভেসে গেছে
ছবি: প্রথম আলো

বন্যার পানির তোড়ে ঘর ভেসে গেছে। সেই সঙ্গে গেছে ঘরের যাবতীয় জিনিসপত্রও। এখন পানি নেমে গেলেও পড়ে আছে কেবল শূন্য ভিটা। সেটি দেখাতে গিয়েই হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন মো. মাসুক মিয়া (৪০)। কাঁদতে কাঁদতেই বলেন, ‘আমি প্যারালাইসিস রোগী। বউ-বাইচ্চা লইয়া বিপদে আছি। ঘর বানানোর ক্ষমতাও আমার নাই। বানের পানি আমার সব শ্যাষ করি দিছে!’

মাসুকের বাড়ি সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার শিমুলতলা গুচ্ছগ্রামে। জুনের মাঝামাঝিতে বন্যায় সিলেটের বিভিন্ন এলাকার মতো মাসুকের ঘরও প্লাবিত হয়। তখনই পানির তীব্র স্রোতে তাঁর ঘর ভেসে যায়। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মাসুক ঠাঁই নেন গ্রামের পাশের এক বালুর ঢিবিতে। ২০ দিন সেখানে কাটিয়ে ৫ জুলাই গ্রামে ফিরলেও ঘরে উঠতে পারেননি। এখন অন্যের বাড়িতেই কাটছে মাসুকদের জীবন।

গত রোববার সরেজমিনে দেখা গেছে, গ্রামের চারপাশে পানি থাকলেও মাসুকদের বাড়ি থেকে পানি নেমে গেছে। বাঁশের খুঁটি আর টিনের চালার ঘরের কোনো অস্তিত্বই সেখানে নেই। কেবল শূন্য ভিটা পড়ে আছে। এর আশপাশে বন্যার ক্ষত। সেখানে ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে পাকা মেঝের খানিকটা অংশ। মাসুকের ঘরের বৈদ্যুতিক তার এবং মিটার একটা গাছে পেঁচিয়ে রাখা হয়েছে।

মাসুক মিয়া জানান, পাথর কোয়ারিতে শ্রমিকের কাজ করতেন। দুই বছর আগে প্যারালাইসিস হয়, তার পর থেকে ভারী কাজ করতে পারছেন না। স্ত্রী খালেদা বেগমই এখন দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালান। চার সন্তান তাঁদের। বন্যায় তাঁদের ঘরে বুকপানি হয়। তখন পানির তোড়ে পুরো টিনের ঘরটিই ভেসে যায়। আর্থিক দুরবস্থায় ঘরটি মেরামত করতে পারছেন না। ফলে ঘরহীন অবস্থায় গ্রামের অন্য আরেকজনের বাড়িতে দিনযাপন করছেন।

মাসুক মিয়া আরও জানান, বন্যায় তাঁর দিনমজুর স্ত্রী আয়হীন হয়ে পড়েছেন। ফলে তাঁরা প্রচুর অর্থকষ্টে ভুগছেন। এখন ধারকর্জ করে কোনোরকমে সংসার চালাচ্ছেন।

মাসুকের প্রতিবেশী আবদুর রউফ বলেন, মাসুকের ঘর ভেসে গেছে। এখন কেবল শূন্য ভিটেমাটি পড়ে আছে। মাসুক নিজে অসুস্থ হওয়ায় কাজও করতে পারেন না। ফলে এখন অসহায় জীবন কাটছে তাঁদের। আর্থিক সহযোগিতা ছাড়া কোনোভাবেই মাসুকের পক্ষে ঘরটি পুনর্নির্মাণ করা সম্ভব নয়।