সেতু ইস্যুতে দুই প্রার্থীর বাগ্‌যুদ্ধ

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা নদীর ধারারগাঁও-হালুয়ারঘাট এলাকায় সেতু নির্মাণের বিষয়ে কোন প্রার্থী কোথায় আগে কথা বলেছেন, কে কতটুকু কাজ করছেন, কবে সেতু হবে, সেতুর ফাইল এখন কোন ফ্রিজে আছে—এসব আলোচনায় সরব সুনামগঞ্জ-৪ আসনের (সদর ও বিশ্বম্ভরপুর) দুই প্রার্থী।

সেতু নিয়ে দুই প্রার্থী পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব তাঁদের কর্মী-সমর্থকেরা। এই দুই প্রার্থী হলেন সুনামগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী মোহাম্মদ সাদিক এবং এই আসনের টানা দুইবারের সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির প্রার্থী পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ। দুই প্রার্থী ও তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের সেতু নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার বিষয়টি উপভোগ করছেন সাধারণ ভোটাররা।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুরমা নদীর এই স্থানে সেতু নির্মাণের দাবি নদীর উত্তর পারের মানুষের দীর্ঘদিনের। কিন্তু সেতু হয়নি। এখন নির্বাচন আসায় সেতু ইস্যু সামনে এসেছে বেশ জোরেশোরে। জেলা সদরের এই আসনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা দুই প্রার্থী এই ইস্যুতে দিচ্ছেন পাল্টাপাল্টি বক্তব্য।

সদর উপজেলার সুরমা নদীর উত্তর পারে তিনটি ইউনিয়ন রয়েছে। এগুলো হলো সুরমা, জাহাঙ্গীরনগর ও রঙ্গারচর। এই তিন ইউনিয়নের মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর ও রঙ্গারচর সীমান্তবর্তী এলাকা। এই তিন ইউনিয়নের মানুষকে জেলা সদরে যাতায়াত করতে হলে সুনামগঞ্জ নদী পারাপার হতে হয়। বিশেষ করে জাহাঙ্গীরনগর ও সুরমা ইউনিয়ন এবং রঙ্গারচর ইউনিয়নের একাংশের লোকজনকে সুরমা নদীর ধারারগাঁও-হালুয়ারঘাট এলাকার খেয়া পারাপার হতে হয়। এতে তাঁদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।

আবার জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ডলুরা এলাকায় রয়েছে একটি সীমান্তহাট, ৪৮ জন শহীদের সমাধি। পর্যটকদের কাছেও এলাকাটি প্রিয়। সীমান্তবর্তী এই এলাকায় জেলা শহর থেকেও অনেক লোক যাতায়াত করেন। ডলুরা এলাকায় একটি ইমিগ্রেশনসহ স্থলবন্দর স্থাপনের পরিকল্পনাও সরকারের রয়েছে। এ জন্য দুই দেশের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ওই এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এ ছাড়া এই সীমান্ত এলাকায় সবজি চাষ বেশি হয়। এখানে সেতু হলে মানুষের যাতায়াতের সুবিধার পাশাপাশি ব্যবসারও প্রসার ঘটবে।

নানা কারণে মানুষ দীর্ঘদিন থেকে এখানে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কর্মকর্তারাও একাধিকবার স্থানটি পরিদর্শন করেছেন। প্রাথমিক সমীক্ষাও হয়েছে। চূড়ান্ত সমীক্ষা হওয়ার পর প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন হওয়া কথা। কিন্তু চূড়ান্ত সমীক্ষা হয়নি।

এখন নির্বাচনে উত্তর সুরমার তিন ইউনিয়নের ভোটারদের কাছে টানতে সেতু ইস্যু সামনে চলে এসেছে। জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলছেন, সংসদ সদস্য হওয়ার পর এই সেতু নিয়ে প্রথম সংসদে কথা বলেছেন, দাবি জানিয়েছেন। জাতীয় পর্যায়ে তাঁর আগে এই সেতু নিয়ে অন্য কেউ কোনো কথা বলেননি।

এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাদিক বলেছেন, তিনি যখন শিক্ষাসচিব ছিলেন, তখন এই সেতুর জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আধা সরকারি পত্র (ডিও) দিয়েছেন। আজ যিনি সেতু নিয়ে অনেক কথা বলছেন, তখন তিনি এই অবস্থানে ছিলেন না। মোহাম্মদ সাদিক এক নির্বাচনী সভায় বলেছেন, ‘এই সেতু খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেতুটির জন্য আমি অনেক দিন ধরে কাজ করছি। সেতুর ফাইল কোন ফ্রিজে আছে, আমি জানি। আমি দায়িত্ব পেলে সেই ফাইল আবার চালু হবে। এখানে সেতু হবে।’

এর জবাবে পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেছেন, ‘ফাইলের খবর তিনি (মোহাম্মদ সাদিক) জানেন বলছেন। তাহলে আমার এখন সন্দেহ হচ্ছে, কেন চূড়ান্ত সমীক্ষা দল আসেনি। উত্তর পারের মানুষ সব সময়ই লাঙ্গলে ভোট দেন। তাঁদের কোনোভাবেই ভুল বোঝানো যাবে না।’ পীর ফজলুর রহমানের এই বক্তব্যের জবাবে মোহাম্মদ সাদিক বলেছেন, ‘হ্যাঁ, আমি জানি ফাইল কোথায় আছে। জনপ্রতিনিধিদের মতো সরকারি কর্মকর্তারা অনেক কিছু করতে পারেন না। আমি যদি আগামী ৭ জানুয়ারির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই, তাহলে এটা করে দেখাব।’

জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের নারায়ণতলা এলাকার বাসিন্দা শাহ আলম বলেন, সুরমা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের দাবি বহু পুরোনো। একটি সেতু হলে পুরো সীমান্ত এলাকার চিত্র বদলে যাবে।

এলাকার বাসিন্দা আইনজীবী শামীম আহমদ বলেন, ‘১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, কিন্তু আওয়ামী লীগের দলের সংসদ সদস্য নেই। মূলত এ কারণেই আমরা উন্নয়ন থেকে পিছিয়ে আছি। এবার এখানে নৌকার প্রার্থী আছেন। আশা করি সামনে আমরা ধারারগাঁও-হালুয়ারঘাট সেতুসহ কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন পাব।’

জাতীয় পার্টি জেলা কমিটির সদস্যসচিব মনির উদ্দিন বলেছেন, সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান গত ১০ বছর এলাকার মানুষের উন্নয়নে কাজ করেছেন। এই সেতুর জন্য তিনি আন্তরিক চেষ্টা করেছে। সেতু প্রকল্পটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।

সুনামগঞ্জ সচেতন নাগরিক কমিটির সদস্য মো. রাজু আহমেদ বলেছেন, সুরমা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ ইস্যু নিয়ে দুই প্রার্থী ও তাঁদের কর্মী-সমর্থকেরা যেভাবে সভা, সমাবেশ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়, পাল্টাপাল্টি কথা বলছেন, সাধারণ ভোটাররা সেটি উপভোগ করছেন। তাঁরা একে-অপরের প্রতি সম্মান রেখে এভাবে নির্বাচনী কার্যক্রম চালাবেন, আমরা এটাই প্রত্যাশা করি।’

এই সেতু প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে এলজিইডির সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুব আলমের মুঠোফোনে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন ধরেননি।