পরীক্ষায় অংশ নিতে না দেওয়ায় বিভাগে তালা-ভাঙচুর, পরীক্ষা স্থগিত

পরীক্ষায় অংশগ্রহণের দাবিতে বিভাগের সামনে শিক্ষার্থীদের অবস্থান। রোববার দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী ভবনে
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন মাত্র ১২ শিক্ষার্থী। ডিজকলেজিয়েট (নির্দিষ্টসংখ্যক ক্লাসে অনুপস্থিত শিক্ষার্থী) হওয়ায় ৩১ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। এ ঘটনায় পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার দাবিতে আজ পরীক্ষাকক্ষের জানালা ভাঙচুর ও সভাপতির কক্ষে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন করেছেন ওই শিক্ষার্থীরা। পরে বিকেলে জরুরি একাডেমিক সভা ডেকে পরবর্তী পরীক্ষাগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।

আজ রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী ভবনে ফোকলোর বিভাগের সামনে এ ঘটনা ঘটে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা দুপুর ১২টা থেকে প্রায় ৩ ঘণ্টা বিভাগের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। পরে প্রশাসনের আশ্বাসে আন্দোলনকারীরা তালা খুলে দেন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সাতটি দাবি তুলে ধরেন। কয়েকটি দাবি হলো মাস্টার্সের পূর্বনির্ধারিত পরীক্ষা স্থগিত করা, সব শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় দেওয়ার সুযোগ দিয়ে নতুন করে পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা, ক্লাসের জন্য নির্ধারিত সময়সূচির তোয়াক্কা না করে শিক্ষার্থীদের সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা না করে শিক্ষকদের খেয়ালখুশিমতো ক্লাস নেওয়ার অপসংস্কৃতি বন্ধ করা।

বিভাগ ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের মাস্টার্সের মোট ৪৪ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩১ শিক্ষার্থী ডিজকলেজিয়েট হন। আজ দুপুর ১২টায় পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সকাল থেকেই ওই ডিজকলেজিয়েট শিক্ষার্থীরা বিভাগের সামনে অবস্থান নেন। ওই সময় বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন এসে তাঁদের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে জানালে তাঁরা অবস্থান কর্মসূচি ত্যাগ করেন। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে বাকি ১৩ শিক্ষার্থীকে নিয়ে পরীক্ষা শুরু হয়। খবরটি জানতে পেরে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আবার বিভাগের সামনে জড়ো হন এবং বিভাগের সভাপতির কক্ষে তালা লাগিয়ে দেন। তবে তাঁদের মধ্যে একজন পরীক্ষাকক্ষ ত্যাগ করে ডিজকলেজিয়েট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে আন্দোলনে অংশ নেন। এ সময় তাঁরা পরীক্ষাকক্ষের জানালার কাচ ভাঙচুর করেন। আধা ঘণ্টা পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম ও প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক এসে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দিলে তাঁরা তালা খুলে দেন। পরে ১২ পরীক্ষার্থীই প্রথম পরীক্ষাটি শেষ করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আন্দোলনকারী একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, তাঁদের ফরম পূরণের নোটিশ দেওয়া হয় ১৭ সেপ্টেম্বর। সেখানে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জরিমানা ছাড়া এবং জরিমানাসহ শেষ সময় ছিল ২১ সেপ্টেম্বর। কিন্তু ১৮ তারিখ দুপুরে বিভাগের নোটিশে জানানো হয়, ৩১ শিক্ষার্থী ডিজকলেজিয়েট হয়েছেন।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, অধিকাংশ শিক্ষক নির্দিষ্ট সময়ে ক্লাস নেন না। সকাল নয়টায় ক্লাসের সময় দিয়ে ক্লাস নেন দুপুরের পর। আবার অনেক কোর্সের একটি বা দুটি ক্লাস নেওয়া হয়েছে। কয়েকটি কোর্সের উপস্থিতি যুক্ত করা হয়নি। এ ছাড়া তাঁদের অধিকাংশ শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হয়রানির জন্য এমনটি করা হচ্ছে।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষক বলেন, ‘আমাদের শিক্ষকদের অনেকেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কিন্তু আমরা শিক্ষকেরা সবাই একমত হয়েছি, ডিজকলেজিয়েট শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে পারবেন না। কারণ, তাঁরা ক্লাস করেননি। এমন কিছু শিক্ষার্থী আছেন, যাঁরা একটি ক্লাসও করেননি। ছাত্রলীগ করে বলে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয়নি, দাবিটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’

জানতে চাইলে ফোকলোর বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ডিজকলেজিয়েট শিক্ষার্থীরা মাস্টার্সের চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসতে পারবেন না বলে বিভাগের একাডেমিক সভায় সিদ্ধান্ত হয়। তাঁদের পরীক্ষায় বসতে না দেওয়ায় তাঁরা আন্দোলন করেছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই এক দিনও ক্লাস করেননি। বিকেলে বিভাগের জরুরি একাডেমিক সভায় পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আজ অনুষ্ঠিত পরীক্ষার বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।