রাজশাহীতে সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের আয়োজনে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহীতে টেলিভিশনে লাইভ চলার সময় এটিএন নিউজের দুই সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিকেরা। আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের আয়োজিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে সাংবাদিকেরা এ দাবি জানান। অন্যথায় তাঁরা কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন।

গত সোমবার সকালে নগরের বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) কার্যালয় থেকে টেলিভিশনে লাইভ করার সময় এটিএন নিউজের জেলা প্রতিনিধি বুলবুল হাবিব ও ক্যামেরাপারসন রুবেল ইসলামের ওপর হামলা হয়। এতে তাঁরা দুজন আহত হন ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। ওই দিন সোমবার রাতে বুলবুল হাবিব মামলা করলেও আজ শনিবার পর্যন্ত এই মামলায় কেউ গ্রেপ্তার হননি।

মানববন্ধনের রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ওই ঘটনার মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যেই আমরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলেছি। পরে আমরা নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশিদসহ কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেছি। আমাদের এই আন্দোলনের কারণে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ দুজনকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে।’

রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হক বলেন, এটিএন নিউজের দুই সাংবাদিকের ওপর যে ন্যক্কারজনক হামলা হয়েছে, তা তদন্তের কিছু নেই। ঘটনাটি টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত হচ্ছিল। এর ফুটেজ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিএমডিএ কর্তৃপক্ষের কাছেও আছে। এমন প্রমাণ থাকার পরও যদি এই দুর্নীতিবাজ নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশিদের বিরুদ্ধে আইনগত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয়, তাহলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। দ্রুত এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি জানানো হচ্ছে।

কর্মসূচিতে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ বলেন, পাঁচ দিন হয়ে গেলেও এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। নামমাত্র যাঁদের বরখাস্ত করা হয়েছে, তাঁরা মূল দায়ী নন। যিনি নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। যেই দেশে সাংবাদিকেরা কথা বলতে পারেন না, সেই দেশে সাধারণ মানুষের কথা বলার জায়গা নেই।

সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (রাবিসাস) সভাপতি নুরুজ্জামান খান বলেন, ‘বাংলাদেশে সাংবাদিক নির্যাতন নতুন কোনো ঘটনা নয়। এসব ঘটনায় কোনো বিচার হয়নি। সরকারি কর্মকর্তাদের একটাই শাস্তি, তাঁদের বদলি করা হয়। কিন্তু বদলি কখনো কোনো শাস্তি হতে পারে না। যেহেতু সাংবাদিকদের গায়ে হাত তোলা হয়েছে, তাই এটি ফৌজদারি অপরাধ। আমরা চাই হত্যাচেষ্টা মামলায় তাঁকে শাস্তির আওতায় আনা হোক। একই সঙ্গে জড়িতদের স্থায়ীভাবে চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হোক, যেন ভবিষ্যতে দুর্নীতিবাজেরা আর সাংবাদিকদের গায়ে হাত তুলতে সাহস না পায়।’

মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে বক্তৃতা করেন ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম ও ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গোলাম সারওয়ার। বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক ওয়াসিফ রিয়াদের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে ডেইলি স্টারের নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার আলী, রাবিসাসের সাধারণ সম্পাদক নূর আলম, বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি রাশেদ শুভ্র, বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সভাপতি বেলাল হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন। এ সময় ক্যাম্পাস ও নগরের প্রায় অর্ধশত সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।