ডিএনএ টেস্টে বাবার পরিচয় শনাক্ত, ছেলেকে সম্পত্তি লিখে দেওয়ার বিষয়ে জানাতে বললেন হাইকোর্ট

রংপুর জেলার মানচিত্র

রংপুরের মিঠাপুকুরে ধর্ষণের এক মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামির সন্তানকে তাঁর অর্ধেক সম্পত্তি লিখে দেওয়ার বিষয়ে জানাতে বলেছেন হাইকোর্ট। গতকাল বুধবার বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম জহুরুল হকের বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

ওই ব্যক্তির নাম আসাদুল ইসলাম (৪২)। ধর্ষণের ওই মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল। সে সময় ডিএনএ পরীক্ষায় ওই সন্তান তাঁর বলে শনাক্ত হয়। এই অবস্থায় ছেলের নামে অর্ধেক সম্পত্তি লিখে দেওয়ার শর্তে তাঁকে উচ্চ আদালত জামিন দিয়েছিলেন।

আগামী ২১ মে সম্পত্তি লিখে দেওয়ার আদেশ বাস্তবায়নের অগ্রগতির বিষয়ে আসামির আইনজীবীকে আদালতে জানাতে বলা হয়েছে। এ সময় আসাদুল ইসলাম আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে ধর্ষণের দায়ে আসাদুল ইসলামকে ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে হাইকোর্টের আইনজীবী রফিকুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসামি আসাদুল ইসলামের নিজের ও তাঁর বাবার নামে অনেক জমি রয়েছে। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া আসাদুলের সম্পত্তির অর্ধেক লিখে দেওয়ার শর্তে হাইকোর্ট তাঁর জামিন মঞ্জুর করেছিলেন। বিষয়টি সমাধানের জন্য আসামিপক্ষের আইনজীবী নূরুল ইসলাম সুজনকে আদালতের পক্ষ থেকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’

বাদীপক্ষের আইনজীবী রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, আসাদুল ইসলামের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে গর্ভবতী হন এক নারী। কিন্তু আসাদুল তাঁকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান। এ ঘটনায় ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন ওই নারী। গ্রামে সালিস করেও বিষয়টি সমাধান না হওয়ায় আদালতে গড়ায়। এরই মধ্যে ওই নারী ছেলেসন্তান প্রসব করেন। ছেলেটির বয়স এখন ১৫ বছর। ডিএনএ টেস্টে প্রমাণিত হয়েছে ছেলেটির বাবা আসাদুল ইসলাম। ছেলেটির ভরণপোষণ ও বাবার পরিচয় পেতে ওই নারী আইনি লড়াই শুরু করেন।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ওই নারী মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি গতকাল হাইকোর্টে উপস্থিত ছিলাম। আমার সন্তানের পিতৃত্বের পরিচয় পেয়েছি। আমার সন্তান একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। তার বয়স এখন ১৫ বছর।’

মামলার বিবরণের উদ্ধৃতি দিয়ে রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের সরকারি কৌঁসুলি খন্দকার রফিক হাছনাইন জানান, ২০০৭ সালে মিঠাপুকুর উপজেলার একটি গ্রামে ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরীর সঙ্গে আসাদুল ইসলামের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আসাদুল বিয়ের কথা বলে মেয়েটির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়ান। মেয়েটি গর্ভবতী হয়ে পড়লে আসাদুলকে বিয়ের জন্য চাপ দেন। বিয়েতে রাজি না হওয়ায় মেয়েটি বাদী হয়ে ২০০৭ সালের ৩ জুন আসাদুল ইসলাম ও তাঁর বাবাকে আসামি করে মিঠাপুকুর থানায় ধর্ষণ মামলা করেন। মামলার তদন্ত শেষে একই বছরের ২২ ডিসেম্বর আসাদুলের নামে পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। পরে আসাদুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সাক্ষ্য প্রমাণ ও শুনানি শেষে ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল আসাদুলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের বিচারক জাবিদ হোসাইন।