বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে সিনিয়র-জুনিয়র সংঘর্ষ, আহত ৫

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ নাজমুল আহসান হলের সিনিয়র-জুনিয়র শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয়েছেন পাঁচ শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে চার শিক্ষার্থীকে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে।

হলটির প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. শহীদুল আলম বলেন, হলের নিয়ম-শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে সংঘর্ষে জড়ানোর কারণে চারজন শিক্ষার্থীকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনা করা হয়েছে। আহত একজন শিক্ষার্থীকে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন সময় শহীদ নাজমুল আহসান হলের জুনিয়র শিক্ষার্থীদের ‘গেস্ট রুমে’ নিয়ে নির্যাতন (র‍্যাগিং) করে আসছিলেন সিনিয়র শিক্ষার্থীরা। গতকাল সন্ধ্যায় হলের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের ‘গেস্ট রুমে’ নিয়ে মারধর করেন তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা। এতে হলের সিনিয়রদের ওপর ক্ষুব্ধ হন দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা। পরে এ ঘটনার জেরে সিনিয়র শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা। এ সময় অন্যান্য হল থেকে বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা ঝামেলা মেটাতে এলে তাঁদের ওপর চড়াও হন দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা। এতে পাঁচজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে চারজনকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। একজনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহত পাঁচজন দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্রে জানা যায়, হলের সিটসংক্রান্ত কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত ছাত্রলীগ কর্মীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের অন্যান্য বর্ষের শিক্ষার্থীদের কোন্দল তৈরি হয়। সেই কোন্দলের জেরে গতকাল সন্ধ্যায় গালাগালি ও কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে হলের সিনিয়র ও জুনিয়র শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালে দুটি কক্ষের জানালা ও দরজা ভাঙা হয়েছে। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের সভাপতি পরিস্থিতি শান্ত করতে ঘটনাস্থলে এলে তাঁকে উদ্দেশ্য করে ইটপাটকেল ছোড়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ কেয়ার সেন্টারের ডেপুটি চিফ চিকিৎসা কর্মকর্তা পার্থ সেন বলেন, ‘আমার কাজ শুরু হয়েছে রাত ৯টা থেকে। আমার আগে বেলা তিনটা থেকে ডিউটিতে ছিলেন মো. সাদিকুল ইসলাম খান। তিনি আমাকে জানিয়েছেন, আহত অবস্থায় কোনো শিক্ষার্থী হেলথ কেয়ার সেন্টারে আসেননি। শিক্ষার্থীরা অ্যাম্বুলেন্সে করে হয়তো মময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেছেন।’

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীর ভাষ্য, গতকাল সন্ধ্যা সাতটার দিকে নাজমুল আহসান হল থেকে প্রচণ্ড হট্টগোল শোনা যায়। কিছুক্ষণ পরেই কয়েকজন শিক্ষার্থীকে দৌড়ে যেতে দেখা যায়। তাঁদের পেছন থেকে ধাওয়া দিচ্ছিলেন অপর কয়েকজন শিক্ষার্থী। পরে হল ও পূবালী ব্যাংকসংলগ্ন সড়ক দিয়ে ১২ থেকে ১৫টি মোটরসাইকেল চলে যায়। প্রতিটি মোটরসাইকেলে ২ থেকে ৩ জন করে ছিলেন। প্রত্যেকের হাতেই দেশীয় অস্ত্র, রামদা, ছুরি, হকিস্টিক, ক্রিকেট স্টাম্প, সাইকেলের চেইন ছিল। মোটরসাইকেলগুলো নিয়ে তাঁরা বোটানিক্যাল গার্ডেনের সামনে দিয়ে কে আর মার্কেট এবং কৃষি অনুষদের করিডোর হয়ে আবদুল জব্বার মোড়ের দিকে চলে যান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মো. আরিফ সাকিল বলেন, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কারণে দ্বিতীয় বর্ষের চারজন শিক্ষার্থীকে প্রক্টোরিয়াল বডির কাছে হস্তান্তর করেছেন হল প্রভোস্ট। বর্তমানে তাঁরা কোতোয়ালি থানায় পুলিশের হেফাজতে আছেন। তদন্ত সাপেক্ষে তাঁদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।