সাড়ে ২৭ কেজির বাগাড় বিক্রি হলো ৪১ হাজারে

প্রায় সাড়ে ২৭ কেজি ওজনের একটি বিপন্ন বাগাড় মাছ পদ্মা ও যমুনা নদীর মোহনায় জালে ধরা পড়েছে। শুক্রবার সকালে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ফেরিঘাট বাজার এলাকায়
ছবি: এম রাশেদুল হক

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ার পদ্মা ও যমুনা নদীর মোহনায় জালে ধরা পড়েছে প্রায় সাড়ে ২৭ কেজি ওজনের একটি বিপন্ন বাগাড় মাছ। আজ শুক্রবার সকালে জেলে আবদুল জব্বার ওরফে জব্বার হালদারের জালে বাগাড়টি ধরা পড়ে। মাছটি স্থানীয় এক ব্যবসায়ী সাড়ে ৩৮ হাজার টাকায় কিনে ঢাকার এক ব্যক্তির কাছে ৪১ হাজার টাকায় বিক্রি করেন।

স্থানীয় জেলেরা জানান, আজ সকালে জেলেরা দৌলতদিয়া চর করনেশনা এলাকার পদ্মা ও যমুনা নদীর মোহনায় জাল ফেলেন। বেশ কিছু সময় পর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জাল গুটিয়ে নৌকায় তুলতেই জেলেরা দেখতে পান বড় একটি বাগাড়। প্রায় ৫ মাস পর এত বড় বাগাড় জেলেদের জালে আটকা পড়ল। জেলেরা মাছটি বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন দৌলতদিয়া বাজার রওশন মোল্লার আড়তে। সেখানে নিলামে তোলা হলে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ফেরিঘাট এলাকার মাছ ব্যবসায়ী শাহজাহান শেখ ১ হাজার ৪০০ টাকা কেজি দরে কিনে নেন।

দৌলতদিয়ার ৫ নম্বর ফেরিঘাট এলাকার মাছ ব্যবসায়ী মো. শাহজাহান শেখ বলেন, নিলামে অংশ নিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ১ হাজার ৪০০ কেজি দরে মোট ৩৮ হাজার ৫০০ টাকায় বাগাড়টি কিনে নেন। পরে মুঠোফোনে বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করে ঢাকার মিরপুর-১ এলাকার এক ব্যবসায়ীর কাছে কেজিপ্রতি ১০০ টাকা লাভে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে মোট ৪১ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। বাগাড়টি দুপুরে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

এর আগে ১৩ জানুয়ারি গোয়ালন্দের পদ্মা ও যমুনা নদীর মোহনায় প্রায় সাড়ে ২৭ কেজি ওজনের অপর একটি বাগাড় মাছ ধরা পড়েছিল। গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর ভোরে রাজবাড়ী সদর উপজেলার গুদারবাজার এলাকার পদ্মা নদীতে স্থানীয় জেলে নুরাল বিশ্বাসের জালেও ২৭ কেজি ওজনের বাগাড় ধরা পড়েছিল।

বাগাড় একটি বিপন্ন প্রজাতির মাছ। এ ধরনের মাছ শিকার নিরুৎসাহিত করা হলেও গোয়ালন্দের পদ্মা নদীতে প্রায়ই জেলেদের জালে বাগাড় মাছ ধরা পড়ছে। প্রকাশ্য নিলামের মাধ্যমে এই মাছ বিক্রিও হচ্ছে। বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০২২-এর তফসিল অনুযায়ী, বাগাড় বিপন্ন প্রজাতির মাছ। তাই এর শিকার ও বেচাকেনা নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) তালিকা অনুযায়ী, বাগাড় মাছ মহাবিপন্ন প্রাণী।

বাঘাড় মাছ শিকার, ক্রয়, বিক্রয় দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও এর সঙ্গে একমত নন গোয়ালন্দ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ শাহরিয়ার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শুধু বাগাড় মাছ নয়, পাঙাশ, আইড়সহ নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ছোট যেকোনো ধরনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বড় বাগাড় শিকার, ক্রয়-বিক্রয় বা খাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বাধানিষেধ নেই। এমন কোনো নির্দেশনাও তাঁদের কাছে নেই। যে কারণে বড় বাগাড় মাছ শিকারকে তিনি ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন। তিনি আরও বলেন, পদ্মা নদীর মোহনায় পানির গভীরতা কমে যাওয়ায় অনেক ধরনের বড় বড় মাছ আটকে রয়েছে। নদীর গভীরতা থাকলে এসব মাছ আরও উজানে যেতে পারত। তবে বাগাড়সহ যেকোনো বড় মাছ শিকার এ অঞ্চলের জেলেদের জন্য অনেকটা আশীর্বাদস্বরূপ। কারণ, জেলেরা মূলত নদীর ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকেন।