স্ত্রীকে নদীতে ফেলে হত্যার পর শাশুড়িসহ থানায় এসে জিডি করেন স্বামী

গ্রেপ্তার
প্রতীকী ছবি

ঢাকার কেরানীগঞ্জে শিক্ষানবিশ এক নার্সকে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁর স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম রনি মিয়া (২৫)। তিনি নৌবাহিনীর সাবেক সদস্য। কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন শাক্তা ইউনিয়নের দক্ষিণ বালুরচর চেয়ারম্যানবাড়ি এলাকার ফজলুল হকের ছেলে।

নিহত ফারজানা আক্তার (২৩) রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের শিক্ষানবিশ নার্স। পুলিশ বলছে, স্ত্রীকে নদীতে ফেলে হত্যা করেন রনি মিয়া। পরে তিনি নিজেই থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

আজ রোববার দুপুরে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, প্রায় তিন বছর নৌবাহিনীতে চাকরি করে রনি মিয়া স্বেচ্ছায় ইস্তফা দেন। কয়েক মাস আগে ফারজানাকে বিয়ে করেন তিনি। বিয়ের পর থেকেই তাঁদের সংসারে কলহ চলছিল। ফারজানার পুরোনো প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে প্রায় সময়ই ঝগড়া হতো। ১৫ সেপ্টেম্বর ঝগড়া হলে ফারজানা রনিকে জানান, তিনি আর সংসার করবেন না। রনিকে ডিভোর্স দেবেন।

পুলিশ জানায়, ডিভোর্সের কথা শুনে ফারজানাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন রনি মিয়া। ১৫ সেপ্টম্বর রাতেই খাওয়াদাওয়া শেষে ফারজানাকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে কৌশলে কেরানীগঞ্জের বছিলা ব্রিজসংলগ্ন নৌ পুলিশ ফাঁড়ি এলাকায় নিয়ে যান রনি। পরিকল্পনা অনুযায়ী ফারজানাকে নদীর কাছে নিয়ে গিয়ে ধাক্কা দিয়ে নদীতে ফেলে দেন তিনি। নদীতে প্রচণ্ড স্রোত থাকায় ফারজানা পানিতে তলিয়ে যান। এরপর ঘটনাস্থল থেকে রনি চলে এসে আত্মীয়স্বজনদের ফোন দিয়ে জানান, ফারজানা ঝগড়া করে বাসা থেকে বের হয়ে তাঁর সাবেক প্রেমিকের কাছে চলে গেছেন। তাঁকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এরপর রনি তাঁর শাশুড়িকে নিয়ে থানায় গিয়ে নিজেই বাদী হয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় একটি জিডি করেন।

পুলিশ সুপার বলেন, নিখোঁজ ফারজানার সন্ধান পেতে পুলিশ ফারজানার সাবেক প্রেমিক নাদিম, বান্ধবী লিমা আক্তার, রুম্পা চন্দ্রিমা ও বন্ধু সাগর, রায়হান ও আরজিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ৯৯৯–এর মাধ্যমে পুলিশ খবর পায়, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের জাজিরা নামার বোর্ডঘাট এলাকায় বাদশা বেপারির ইটখোলার পশ্চিম পাশে পানি ও কচুরিপানার ভেতরে অর্ধগলিত অবস্থায় অজ্ঞাতনামা এক নারীর মরদেহ ভাসছে। পরে রনি মরদেহটি তাঁর স্ত্রী ফারজানার বলে শনাক্ত করেন।

এ ঘটনায় ফারজানার ভাই আরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় একটি মামলা করেন। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণ করে রনিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তাঁর দেওয়া তথ্য যাচাই করে দেখা যায়, সব কটি অসত্য। এরপর পুলিশ রনিকে গ্রেপ্তার করে। একপর্যায়ে স্ত্রী ফারজানাকে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করে লাশ গুম করার বিষয়টি স্বীকার করেন রনি।

পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান আরও বলেন, পানির স্রোত সম্পর্কে রনি মিয়া ভালো ধারণা ছিল। ফারজানা সাঁতার জানতেন না। এ সুযোগ নিয়ে তিনি ফারজানাকে নদীতে ফেলে ডুবিয়ে হত্যা করেন। মামলাটি তদন্তাধীন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস দক্ষিণ) আমীনুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কেরানীগঞ্জ সার্কেল) শাহাবুদ্দীন কবীর, কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুন অর রশিদ, উপপরিদর্শক অলোক কুমার প্রমুখ।