‘ফুলবাগানটি রক্ষায় প্রাণান্ত চেষ্টা করব’
‘ময়লার ভাগাড়ের দুর্গন্ধে দোকানে বসা যেত না। মসজিদের মুসল্লিদের কষ্ট করে নামাজ পড়তে হতো। সেই ময়লা পরিষ্কার করে সেখানে ফুলবাগান তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন পরিবেশবাদী কয়েকজন তরুণ। এটি একটি নান্দনিক উদ্যোগ। ওই তরুণেরা বলেন, ‘আমরা ফুলবাগানটি রক্ষায় প্রাণান্ত চেষ্টা করব। কেউ যাতে আর সেখানে ময়লা ফেলতে না পারে, সেই ভূমিকাও রাখব।’
যশোর শহরের চাঁচড়া বাজার মোড়ে ময়লার ভাগাড় সরিয়ে ফুলবাগানে পরিণত করার বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় বাসিন্দা মশিউর রহমান এসব কথা বলেন।
ওই ময়লার স্তূপের উল্টো পাশেই মশিউর রহমানের মুদিদোকান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিন বছর ধরে বাজারের ওই জায়গা ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়। দেখার কেউ ছিল না। গত মঙ্গলবার সকালে দেখি হাতে গ্লাভস (মোজা) ও সবুজ রঙের গেঞ্জি (টি–শার্ট) পরা কয়েকজন তরুণ ভাগাড় থেকে ময়লা পরিষ্কার করে ফুলের গাছ রোপণ করছেন। পরদিন বুধবার সকাল থেকে আবার সেখানে মাটি ফেলা হচ্ছে। সুন্দর একটি ফুলের বাগান হোক—এটা আমাদের প্রাণের চাওয়া। কারণ, ময়লার দুর্গন্ধে আমরা বাজারের বাসিন্দারা টিকতে পারতাম না। ওই বাগান রক্ষায় আমরা প্রাণান্ত চেষ্টা করব।’
যশোরে রেণু পোনা বিক্রির অন্যতম মোকাম চাঁচড়া। চাঁচড়া সড়ক দ্বীপের পশ্চিম পাশে শিং–কই মাছের পোনা বিক্রির হাট বসে। আর ওই সড়কদ্বীপের দক্ষিণ পাশের বাজারসংলগ্ন মহাসড়কের পাশেই তৈরি হয়েছে ময়লার ভাগাড়। মাসের পর মাস ময়লা-আবর্জনা জমে থাকলেও তা পরিষ্কার করার তাগিদ ছিল না কারও। পথচারীদের ওই এলাকা দিয়ে যাতায়াত করতে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হতো। এ অবস্থায় স্থানীয়দের দুর্ভোগ লাঘবে এগিয়ে আসেন পরিবেশবাদী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিডি ক্লিন যশোরের সদস্যরা।
গত বুধবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের চাঁচড়া বাজারসংলগ্ন সড়কদ্বীপের পাশের ময়লার স্তূপ পরিষ্কার করে মাটি ফেলা হচ্ছে। তিনজন শ্রমিক মাটি ফেলার কাজ করছেন। বাঁশের বেড়া দিয়ে জায়গাটি ঘেরা রয়েছে। পরে সেখানে ফুলের ৫০টি চারা রোপণ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সংগঠনটির খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়ক আল হেলাল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই ভাগাড় থেকে ১৬৫ পলি ব্যাগ ময়লা পরিষ্কার করে ফেলা হয়েছে। সেখানে ৫০টি ফুলের চারা রোপণ করা হয়েছে। সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন শহর গড়ার লক্ষ্যে ময়লার ভাগাড় পরিষ্কার করে ফুলের বাগান করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এটি নিয়ে যশোর জেলায় আটটি বাগান করা হয়েছে। যদিও উপশহর এলাকায় উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের বাগানটি ছাড়া কোনোটি এখন আর দৃশ্যমান নেই।
২০১৮ সাল থেকে ময়লা পরিষ্কারের পাশাপাশি মানুষকে সচেতনতা তৈরিতেও কাজ করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার সারা দিন সংগঠনটির ২৫ কর্মী ওই ময়লার ভাগাড়টি পরিষ্কার করেন। সংগঠনটির সদস্যরা প্রথমে ভাগাড়টি পরিষ্কার করেন। এরপর সেখানে ফুলের বাগান তৈরির কার্যক্রম উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক হুসাইন শওকত।
যশোরকে পরিচ্ছন্ন শহরে পরিণত করতে স্বেচ্ছাসেবীদের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে উপপরিচালক হুসাইন শওকত বলেন, ‘আমি কয়েক বছর ধরে সংগঠনটির কাজ দেখছি। তারা পরিচ্ছন্ন শহর গড়তে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের দেখে মানুষ আরও সচেতন হবে, এটাই প্রত্যাশা করি।’
ফুলের বাগান তৈরি করলেও ওই জায়গা বেদখলে চলে যাওয়ার শঙ্কার কথা জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, এই বাজারের জমি খুব মূল্যবান। যে কারণে সরকারি ওই জায়গা দখল করে প্রভাবশালীদের দোকানপাট তৈরির আশঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের এই শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কারণ, ময়লার ভাগাড় সরানো জায়গাটির দুই পাশের সরকারি জায়গা দখল করে অন্তত ১০টি স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে।