প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে শিশুদের রক্ষার জন্য ১০ দফা সুপারিশ

খুলনা নগরের সিএসএস আভা সেন্টারে অনুষ্ঠিত হওয়া উপকূলীয় শিশু জলবায়ু সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক
ছবি: প্রথম আলো

জলবায়ু পরিবর্তনে প্রকৃতিতে পরিবর্তন আসছে। এর প্রভাব পড়ছে সবকিছুর ওপর। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশু, নারী ও বয়স্ক ব্যক্তিরা। তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে শিশুদের রক্ষার জন্য ১০ দফা সুপারিশ উঠে এসেছে উপকূলীয় শিশু জলবায়ু সম্মেলনে। আজ বুধবার খুলনা নগরের সিএসএস আভা সেন্টারে ওই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। জাগ্রত যুব সংঘ (জেজেএস) নামের একটি বেসরকারি সংস্থা ওই সম্মেলনের আয়োজন করে।

পাঁচটি পর্বে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে জলবায়ু নিয়ে কাজ করে, এমন বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞরা মতামত উপস্থাপন করেন। সেই মতামতের ভিত্তিতে সম্মেলনের সমাপনী পর্বে ১০ দফা খুলনা ঘোষণা করা হয়। ওই দফাগুলো হলো দুর্যোগের সময় শিক্ষাব্যবস্থা চালু রাখা, উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ুসহিষ্ণু কৃষিব্যবস্থার উন্নয়ন করা, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে শিশু ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, উপকূলীয় অঞ্চলে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করা, ত্রাণ বিতরণের সময় শিশুদের বিষয়টি বিবেচনায় রাখা, জলবায়ু আলোচনা ও পরিকল্পনায় শিশুদের মতামত গ্রহণ ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, অপরিকল্পিত নগরায়ণ বন্ধ করা, প্লাস্টিকের ব্যবহার সীমিত করা ও পরিবেশবান্ধব পণ্য ব্যবহার নিশ্চিত করা, সম্পদের পরিমিত ব্যবহারের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিপূরণের জন্য ইউনিয়ন ও কমিউনিটি পর্যায়ে বরাদ্দ করা।

সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চল বিশ্বের অন্যতম জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাবিত এলাকা। এই এলাকার শিশুরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বেশি ঝুঁকিতে আছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ঘূর্ণিঝড় এবং সম্পর্কিত জলোচ্ছ্বাসের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হলো আমাদের শিশুরা। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগসংক্রান্ত পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে শিশুদের কোনো অংশগ্রহণ নেই। জলবায়ু সম্মেলন-২০২৩–এর লক্ষ্য হলো উপকূলীয় শিশুদের জলবায়ু পরিবর্তন এবং দুর্যোগঝুঁকি হ্রাসবিষয়ক আলোচনায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে তাদের মধ্যে নেতৃত্ব সৃষ্টি করা। সম্মেলনটি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও সরকারি উন্নয়ন পরিকল্পনার সঙ্গে সম্পৃক্ত। উপকূলীয় শিশু সমস্যা বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের অবহিত করার জন্য শিশুদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন পর্বে আলোচনা করা হয়েছে।

সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ দেশের মধ্যে যেমন বাংলাদেশ, অন্যতম তেমনি বাংলাদেশের মধ্যে উপকূলীয় অঞ্চল হিসেবে খুলনা অনেকটা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকার মানুষ ঝড়-বন্যায় সবকিছু হারিয়ে খুলনা শহরে আশ্রয় নেওয়ায় একদিকে যেমন বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, তেমনি শহরের ওপরও চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। এ জন্য উপকূলীয় এলাকার মানুষের জন্য দুর্যোগ–সহনশীল জীবনমান উন্নয়নে সরকারের সহযোগী হিসেবে বেসরকারি সংস্থাগুলোকেও কাজ করতে হবে। দুর্যোগে যাতে ক্ষতির পরিমাণ কম হয়, সেদিকেও নজর দিতে হবে সবাইকে।

দিনব্যাপী ওই সম্মেলনে জেজেএসের নির্বাহী পরিচালক এ টি এম জাকির হোসেন  সভাপতিত্ব করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন শিশু প্রতিনিধি বৈশাখী সরকার। বিকেলে সমাপনী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার মো. হেলাল মাহমুদ শরীফ, খুলনা বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. ইকবাল হোসাইন, খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, কনসার্ন ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের হেড অব ইন্টারন্যাশনাল প্রোগ্রাম সরজ দাস, ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ কমিটির কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিনা রহমান, ক্লাইমেট ব্রিজ ফান্ড সেক্রেটারিয়েটের হেড মো. গোলাম রব্বানী, ওয়ার্ল্ডভিশনের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর চন্দন জেড গমেজ প্রমুখ।