ট্রেনের নিচে দুই পা হারানো বুলুর কান্না থামছে না

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী রেলস্টেশনে ট্রেনের নিচে পড়ে বুলু বেগমের দুই পা কাটা পড়েছেছবি: প্রথম আলো

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী রেলস্টেশনে গত শনিবার ট্রেনের নিচে পড়ে দুই পা হারানো বুলু বেগমের (৪৫) কান্না থামছে না। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বুলুর সঙ্গে থাকা ছেলে জুয়েল রানা এ কথা জানিয়েছেন। গতকাল সোমবার তিনি মুঠোফোনে বলেন, তাঁর মাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) থেকে এক নম্বর ওয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে। মায়ের খুব কষ্ট হচ্ছে। মা খুব কাঁদছেন।

বুলু বেগমের স্বামী রব্বেল আলী ছিলেন আড়ানী রেলস্টেশনের কুলি। ২০ বছর আগে তিনি মারা যান। বুলু বেগমের বয়স তখন ২৫ বছর। আট ছেলেমেয়ে নিয়ে তিনি অথই সাগরে পড়েন। নিজেদের জমি-জায়গা নেই। রেলের জমিতে বাড়ি বানিয়ে সন্তানদের নিয়ে থাকেন। রেলস্টেশনেই খেজুরপাতার পাটি বিছিয়ে ভাত বিক্রি শুরু করেন। দীর্ঘদিন তিনি একবেলা ভাত বিক্রি করেছেন, আরেক বেলা মাঠে ধান কেটেছেন।

বুলু বেগম নাতনি রাবেয়াকে কোলে নিয়ে রেললাইন পার হওয়ার সময় সেখানে ট্রেন চলে আসে। তিনি নাতনিকে বুকে জড়িয়ে ট্রেনের নিচে পড়ে যান। উদ্ধারের পর দেখা যায়, বুলু বেগমের দুই পা ঊরু থেকে কাটা পড়েছে। বুকে জড়ানো নাতনি অক্ষত আছে।

আরও পড়ুন

গতকাল দুপুরে আড়ানী স্টেশনে বুলু বেগমের ভাতের হোটেলে গিয়ে দেখা যায়, ছোট ছেলে দোয়েল হোটেল খুলেছেন। কিন্তু হোটেল চালু করতে পারেননি। সেখানেই পাওয়া যায় বড় ছেলে ইউসুফ আলীকে। তিনি বললেন, মা ছাড়া ভাতের হোটেল তাঁদের চালানোর জো নেই। ছোট ভাই এসে কোনোরকমে চায়ের চুলা ধরিয়েছেন।

বুলু বেগমের বড় ছেলে ইউসুফ আলী বলেন, ‘আমি বড় ছেলে। আমি মায়ের সব কষ্ট দেকিচি। আমার মা যে কষ্ট করিচে, ওপরে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। সামনে মায়ের সুদিন আর একুনই মায়ের এই সর্বনাশ হইলি।’ ঘটনার দিনের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, তাঁরা চার ভাই। তাঁদের মধ্যে কেউ ভ্যান চালান, কেউ মাঠে কাজ করেন, কেউ সুযোগ পেলে রাজমিস্ত্রির কাজে যান। সবাই একসঙ্গে খান। শুক্রবার তিন নম্বর ভাই রুবেলের বিয়ে ছিল। এ কারণে পরের দিন শনিবারও ভাতের হোটেল বন্ধ ছিল। তবে মা অভ্যাসবশত ছোট ছেলের মেয়েকে নিয়ে স্টেশনে এসেছিলেন। তখন লাইন পার হতে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। মায়ের চিকিৎসা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তাঁরা।

নিজেদের ছাগল বিক্রির টাকা আর মানুষের সাহায্য-সহযোগিতায় চলছে চিকিৎসা।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহামেদ বলেন, বুলু বেগমকে দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। তাঁর অবস্থার উন্নতি হয়েছে। তিনি ভালো আছেন। হাসপাতালের সরকারি যে ওষুধ আছে, তা তাঁকে দেওয়া হচ্ছে।