হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি নিয়ে মায়ের জানাজা পড়া আলী আজমের বাড়িতে মানুষের ভিড়

আলী আজমকে দেখতে তাঁর বাড়িতে গ্রামের লোকজন ও সাধারণ মানুষ ভিড় করছেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালী গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি নিয়ে মায়ের জানাজা পড়া আলী আজম ১ মাস ৯ দিন পর গতকাল বুধবার জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। আলী আজম গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি। তাঁকে দেখতে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই তাঁর বাড়িতে গ্রামের লোকজন ও সাধারণ মানুষ ভিড় করছেন। এর আগে গতকাল মুক্তি পাওয়ার পর রাতে আলী আজম দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে বাড়িতে পৌঁছান।

আলী আজম কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালী গ্রামের উম্মত আলীর ছেলে। আজ সকালে আলী আজমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, আত্মীয়স্বজন ছাড়া আশপাশের গ্রামের মানুষ আলী আজমকে একনজর দেখতে আসছেন।

আরও পড়ুন

বোয়ালী ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম এসেছেন আলী আজমের সঙ্গে দেখা করতে। তিনি বলেন, ‘আলী আজম বিএনপির রাজনীতি করলেও গ্রামের সবার সঙ্গেই তাঁর সুসম্পর্ক আছে। কখনো কারও সঙ্গে তাঁকে বিবাদে জড়াতে দেখিনি। এ কারণে সবাই আজমকে দেখার জন্য ছুটে আসছেন। আমরা জানি, তিনি (আজম) কোনো অপরাধ করেননি।’

বোয়ালী গ্রামের বাসিন্দা আবু রায়হান বলেন, ‘আলী আজমকে যেদিন জানাজার নামাজের জন্য বাড়িতে নিয়ে আসা হয়, তখন আমরা পুলিশকে অনেক অনুরোধ করেছিলাম পায়ের বেড়ি খুলে দেওয়ার জন্য। কিন্তু পুলিশ কোনো অবস্থাতেই আমাদের কথা রাখেনি। বিষয়টা সেদিন দেখতে খুবই খারাপ লেগেছিল।’

১ মাস ৯ দিন পর গতকাল বুধবার জামিনে মুক্তি পেয়েছেন আলী আজম (বাঁয়ে)
ছবি: প্রথম আলো

আলী আজমের আইনজীবী মো. আনিসুর রহমান বলেন, কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা এলাকায় আওয়ামী লীগের একটি কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় করা মামলায় গত ২ ডিসেম্বর আলী আজমকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। কারাগারে থাকাকালে ১৮ ডিসেম্বর তাঁর মা সাহেরা বেগম বার্ধক্যের সমস্যায় মারা যান। শেষবারের মতো মাকে দেখতে ও মায়ের জানাজা পড়াতে আইনজীবীর মাধ্যমে ১৯ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসক বরাবর প্যারোলে মুক্তির আবেদন করেন আলী আজম। কিন্তু ওই দিন দাপ্তরিক কাজ শেষ না হওয়ায় ২০ ডিসেম্বর তিন ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি পান তিনি। মুক্তি পেয়ে সকাল ১০টার দিকে নিজ বাড়ির পাশে মায়ের জানাজায় উপস্থিত হন। পরে বেলা ১১টায় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। মায়ের দাফন শেষে আবার কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। পুরো সময় হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় ছিলেন আলী আজম।

এ ঘটনায় ২১ ডিসেম্বর প্রথম আলোয় ‘হাতকড়া-ডান্ডাবেড়ি নিয়েই মায়ের জানাজা পড়লেন বিএনপি নেতা’ শিরোনামে সচিত্র খবর প্রকাশিত হয়। পরে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

কারাগার থেকে বেরিয়ে আলী আজম বলেন, ‘রাজনীতি করার কারণে মিথ্যা মামলায় আমাকে ১ মাস ৯ দিন কারাভোগ করতে হয়েছে। জেলে যাওয়ার পর আমি আমার মাকে হারিয়েছি। বড় কোনো অপরাধী না হয়েও হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি পরানো অবস্থায় মায়ের জানাজা পড়তে হয়েছে।’

সাংবাদিকদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আলী আজম বলেন, ‘সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশের পর সারা দেশে আমার এ কথা ছড়িয়ে পড়েছে। মানবাধিকারসহ বিভিন্ন সেবামূলক সংগঠন আমাকে সহযোগিতা করায় আমি দ্রুত জামিন পেয়েছি। তা না হলে এখনো আমাকে জেলে থাকতে হতো।’

যত বাধাই আসুক না কেন, দল থেকে সরে যাবেন না জানিয়ে আলী আজম বলেন, ‘জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক আমাকে কল করেছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা আমার বিষয়টা দেখভাল করছেন। আর আমি একজন একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে দলের জন্য সব সময় কাজ করেছি। যত ঝড়ঝাপটা আসুক না কেন, কোনো কারণে দল থেকে পিছিয়ে যাব না। তবে আমি চাই, যাঁরা দলের একনিষ্ঠ কর্মী, দল যেন তাঁদের সেভাবে মূল্যায়ন করে।’