যশোরে হরিজনপল্লির বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ৫ কোটি, সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় বিক্ষোভ

বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে হরিজনপল্লির বাসিন্দাদের বিক্ষোভ। গতকাল রাতে যশোর শহরের চিত্রা মোড়েছবি: প্রথম আলো

বকেয়া বিলের কারণে বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার প্রতিবাদে যশোরে সড়কে আবর্জনা ঢেলে বিক্ষোভ করেছেন হরিজনপল্লির বাসিন্দারা। গতকাল বুধবার রাত আটটা থেকে শহরের চিত্রা মোড়ে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এই বিক্ষোভের কারণে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে বিদ্যুৎ–সংযোগ পেয়ে অবরোধ তুলে নেন হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষেরা।

পৌরসভা ও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যশোরে তিনটি হরিজনপল্লির বাসিন্দাদের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে থাকে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ২০০৭ সালের পর থেকে এ বিলের দায়িত্ব আর পৌর কর্তৃপক্ষ নিতে চাইছে না। ফলে বকেয়া জমতে জমতে প্রায় পাঁচ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এমন অবস্থায় বকেয়া পরিশোধের জন্য বারবার তাগাদা দিয়ে আসছে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ। কিন্তু না পাওয়ায় গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হরিজনপল্লির বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে সংস্থাটি।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বুধবার রাত আটটা পর্যন্ত বিদ্যুৎ–সংযোগ না পাওয়ায় সড়কে বিক্ষোভ শুরু করেন হরিজন কলোনির আট শতাধিক বাসিন্দা। তাঁরা পৌর হেরিটেজ মার্কেটের সামনের সড়কের ওপর ময়লা ঢেলে ও ময়লা পরিবহনের ভ্যান আড়াআড়ি করে রেখে দিয়ে বিক্ষোভ করেন। ব্যস্ততম এ সড়কে অবরোধ করায় দুই পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

যশোরের পুরাতন পৌরসভা ভবনের সামনে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সড়কের তালতলা পিকআপ স্ট্যান্ডের পাশে এবং রেল সড়কের পাশে তিনটি হরিজনপল্লি রয়েছে। পৌরসভা ও হরিজন সম্প্রদায়ের লোকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্রিটিশ আমল থেকে হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজনের জীবন-জীবিকা অনেকটাই পৌর কর্তৃপক্ষ দেখভাল করে আসছে। তিনটি পল্লিতে পৌরসভার নামে তিনটি বৈদ্যুতিক মিটার দেওয়া রয়েছে। ২০০৭ সাল পর্যন্ত পৌর কর্তৃপক্ষ এই মিটারগুলোর বিদ্যুৎ বিল বহন করেছে। সরকারি উদ্যোগে সর্বশেষ ২০০৭ সালে কিছু বকেয়া পরিশোধ করা হয়। এরপর আর বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করায় বকেয়া জমে প্রায় ৫ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। পৌর কর্তৃপক্ষ এখন আর সেই বকেয়ার দায় নিতে চাইছে না। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ নিজেদের নামে আর মিটার না রেখে হরিজনপল্লির বাসিন্দাদের নামে প্রিপেইড মিটার দেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগকে।

আবর্জনা পরিবহনের ভ্যান দিয়ে সড়ক অবরোধ করেন যশোরের হরিজনপল্লির বাসিন্দারা
ছবি: প্রথম আলো

এ ব্যাপারে যশোর পৌরসভার প্রকৌশলী কামাল আহমেদ বলেন, হরিজনদের কাজের বিনিময়ে নির্দিষ্ট বেতন দেওয়া হয়। বাইরে কাজ করেও তারা উপার্জন করে। কাজেই তাদের যথেচ্ছ বিদ্যুৎ ব্যবহারের টাকা আর বহন করবে না পৌরসভা। সেখানে নতুন করে নামে নামে প্রিপেইড মিটার লাগিয়ে দিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগকে। কামাল আহমেদ আরও বলেন, আপাতত তাদের বিদ্যুৎ–সংযোগ দেওয়া হয়েছে। হরিজনদের সঙ্গে আলোচনা করে এ সমস্যা সমাধান করা হবে।

তবে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ যে বেতন দেয়, তা দিয়ে সংসার চলে না বলে দাবি করেছেন যশোর পৌরসভা হরিজন সমিতির সভাপতি মতি লাল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পৌরসভা তাঁদের মাত্র তিন হাজার টাকা করে বেতন দেয়। তা দিয়ে কী হয়? বছরের পর বছর পৌর কর্তৃপক্ষ তাদের সঙ্গে তামাশা করে আসছে। বেতন-ভাতা না বাড়িয়ে বিদ্যুৎ বিল চাপিয়ে দিতে চাইছে। এটা বড় অমানবিক বিষয়।

ব্রিটিশ আমল থেকে তাঁদের বাপ-দাদারা হরিজনপল্লিতে বসবাস করে এলেও কখনো বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়নি উল্লেখ করে মতি লাল আরও বলেন, ‘শুনছি, আমাদের ওপর কয়েক কোটি টাকার বকেয়া বিল চাপাবে। এটাতে আমরা শঙ্কিত। বিল দিলে দেবে পৌরসভা। এ নিয়ে কয়েকবার পৌর মেয়রের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। এখন প্রিপেইড মিটার লাগানো যাবে না, সংযোগ বিচ্ছিন্নও করা যাবে না।’

যশোর ওজোপাডিকোর অভিযানিক অফিসার সহকারী প্রকৌশলী শামসুজ্জোহা কিরণ সাংবাদিকদের বলেন, পৌরসভা দিনের পর দিন বিল পরিশোধের নামে তালবাহানা করেছে। বিশেষ করে হরিজনপল্লির তিনটি মিটারের ব্যাপারে উদাসীনতার পরিচয় দিচ্ছে পৌর কর্তৃপক্ষ। সময় নিলেও কার্যকর করছে না। আর হরিজনদের মুখোমুখি করছে বিদ্যুৎ বিভাগকে।