পাঁচ সেতু ভেঙে ভোগান্তি 

ওই পাঁচ সেতু ভেঙে পড়ায় সাতক্ষীরার তিন উপজেলার লোকজনকে তিন থেকে আট কিলোমিটার পথ ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে। 

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বাকড়া এলাকায় সেতু ভেঙে পড়ায় বাঁশের সাঁকো দিয়ে নদী পারাপার করছে মানুষছবি: প্রথম আলো

সাতক্ষীরায় মরিচ্চাপ নদের ওপর নির্মিত পাঁচটি সেতু ভেঙে পড়েছে। দুই বছর আগে নদীটি খননের কারণে এসব সেতু ভেঙে পড়ে। এরপর এসব স্থানে আর সেতু নির্মাণ করা হয়নি। এতে সাতক্ষীরা সদর, আশাশুনি ও দেবহাটা উপজেলার দুই লক্ষাধিক মানুষ ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। তবে সেতুগুলো ভেঙে পড়ায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। 

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই সেতু পাঁচটি ভেঙে পড়ায় সাতক্ষীরার তিন উপজেলার  লোকজনকে তিন থেকে আট কিলোমিটার পথ ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এসব স্থানে সেতু নির্মাণে উদ্যোগ নিচ্ছে না সরকার। এ পরিস্থিতিতে স্থানীয় লোকজন এসব স্থানে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।

সাতক্ষীরা ও আশাশুনি উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মরিচ্চাপ নদ সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার খোলপেটুয়া নদীর সঙ্গে মিশেছে। নদীটির দৈর্ঘ্য ৩০ কিলোমিটার। এর মধ্যে সাতক্ষীরার বাঁকাল থেকে আশাশুনির শোভনালি পর্যন্ত  ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত মরিচ্চাপ নদের ওপর নয়টি সেতু নির্মাণ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সাতক্ষীরা সদর, আশাশুনি ও দেবহাটা উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়। সেতুগুলোর দৈর্ঘ্য ৩০ থেকে ৬০ ফুট এবং প্রস্থ ১৪ ফুট। এর আশাশুনি উপজেলার বাঁকড়া, কামালকাটি সেতু দুটি দুই বছর আগে ভেঙে পড়ে। আর সাতক্ষীরা সদর উপজেলার গাভা ব্যাংদাহ এলাকা, ব্যাংদাহ আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকা ও দেবহাটার টিকেট এলাকার তিনটি সেতু এক বছর আগে ভেঙে যায়।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব সেতু এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে গতি সঞ্চার করেছিল। সেতুগুলো দিয়ে সাতক্ষীরা সদরের সঙ্গে দেবহাটা ও আশাশুনির মানুষ যাতায়াত করতে পারতেন। ব্যবসা, বিশেষ করে মৎস্য ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক সুবিধা হয়েছিল; কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড দুই বছর আগে মরিচ্চাপ নদ খনন করার পর সেতুগুলো ভেঙে পড়তে থাকে। খননের পর নদীর প্রশস্ততা বেড়ে যাওয়ায় সেতুগুলো আর টেকেনি। কারণ, সেতুগুলোর দৈর্ঘ্য ছিল ৩০ থেকে ৬০ ফুট; কিন্তু নদী খনন করা করে প্রস্থ করা হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ ফুট। 

তবে আশাশুনি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম বলেন, যখন সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল, তখন মরিচ্চাপ নদ ভরাট হয়ে প্রস্থ ছোট হয়ে গিয়েছিল। সেই সময় সেতুগুলো স্বল্প ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল। খনন করে প্রস্থ বেশি করায় নদীর ওপর নির্মিত সেতুগুলো ভেঙে পড়েছে। এখন ১০০ ফুটের বেশি দীর্ঘ সেতু নির্মাণ করতে হবে। তাঁদের নতুন সেতু নির্মাণের প্রকল্প নেই। তা ছাড়া ৬০ ফুটের ওপর সেতু নির্মাণ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। তাদের কাছে এসব স্থানে সেতু নির্মাণের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।    

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার গাভা ব্যাংদাহ এলাকা, ব্যাংদাহ আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকা ও দেবহাটার টিকেট এলাকার সেতুগুলো মরিচ্চাপ নদের মধ্যে ভেঙে পড়েছে। এসব সেতু দিয়ে মানুষ যাতায়াত  করতে পারছেন না। সেতুগুলোর অপর পাশে দেবহাটা উপজেলার কুলিয়া ইউনিয়ন। 

দেবহাটা উপজেলার উত্তর টিকেট গ্রামের গৌর চন্দ্র সরদার বলেন, দেবহাটার ওপারে সাতক্ষীরা সদরের গাভা এলাকায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, এতিমখানা, গাভা কলেজসহ হাট-বাজার আছে। এ নদী পার হয়ে শিক্ষার্থীরা ছাড়াও হাট-বাজারে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ যায়; কিন্তু গাভা ব্যাংদহ এলাকার সেতুটি মরিচ্চাপ নদীতে ভেঙে পড়ায় তাঁদের যাতায়াতে খুব ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। তিন থেকে পাঁচ কিলোমিটারের বেশি পথ ঘুরে তাঁদের চলাচল করতে হচ্ছে। 

আশাশুনি উপজেলার শোভনালি ইউনিয়নের মরিচ্চাপ নদের ওপর নির্মিত বাঁকড়া ও কামালকাটিতে নির্মিত সেতু ভেঙে নদীতে পড়ে আছে। এর মধ্যে বাঁকড়া সেতুর দুই পাশে বাঁশের পাটাতন ও মাঝখানে বাঁশ দিয়ে সাঁকো তৈরি করে ঝুঁকি নিয়ে মানুষ চলাচল করছে। এই সাঁকোর ওপর দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকারও হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। 

কুন্দুড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী সুরভি সুলতানা ও শারাবান তহুরা বলেন, সব সময় তাদের ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে হয়। বিশেষ করে জোয়ারের সময় ভিজে বিদ্যালয়ে যেতে হয়। প্রতিদিন বাঁকড়া থেকে কুন্দুড়িয়া মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী। নদী পারাপারের সময় কেউ না কেউ প্রতিদিন নদীতে পড়ে আহত হয়। 

সাতক্ষীরা সদরের ইউএনও শোয়াইব আহমাদ বলেন, ভেঙে পড়া সেতুগুলোর স্থানে নতুন সেতু নির্মাণের বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

আশাশুনির ইউএনও কৃষ্ণা রায় জানান, বাঁকড়া সেতুটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এলজিইডিকে ওই সেতু নির্মাণের জন্য বলা হয়েছে। 

এসব বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সাতক্ষীরা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান জানান, সেতুগুলো তাঁদের অধীন নয়। তারপরও প্রশাসন থেকে তাঁদের বলায় তাঁরা আশাশুনির বাঁকড়া সেতুটি নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন।