২৫ কেজি চাল দিয়ে কয় দিন চলবে, ভাবনায় লক্ষ্মীপুরের জেলেরা

২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার কারণে বন্ধ মাছ ধরা। কর্মহীন জেলেরা এখন জাল মেরামতে ব্যস্ত। গতকাল সকালে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর বংশী নাইয়াপড়া এলাকায়। প্রথম আলো

প্রচণ্ড রোদ উপেক্ষা করে লালশাক নিয়ে বাজারে যাচ্ছিলেন আজিজ সর্দার (৫০)। সঙ্গে তাঁর পাঁচ বছর বয়সী ছেলে। লালশাক বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া যাবে, তা দিয়েই চাল কিনবেন চার সদস্যের পরিবারের জন্য। লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার ঘাসিয়ার চরের বাসিন্দা আজিজ সর্দার পেশায় জেলে। সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় তাঁর আয়ও নেই। নিবন্ধিত জেলে হওয়ার পরও তিনি সরকারি বরাদ্দের চাল পাননি। এ কারণে বাড়ির আঙিনায় হওয়া লালশাক বিক্রি করে চাল কেনার জন্য বাজারে যাচ্ছিলেন বলে জানান।

১২ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে আগামী ২ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন মেঘনা নদীতে মাছ ধরা বন্ধ। এ সময়ে ইলিশ আহরণ, কেনাবেচা, পরিবহন, বাজারজাত ও বিনিময় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। লক্ষ্মীপুরের ৪টি উপজেলার নিবন্ধিত ৪৬ হাজার ৪৯ জন জেলের মধ্যে ৩৯ হাজার ৭৫০ জন সরকারি বরাদ্দের ২৫ কেজি করে চাল পেয়েছেন। আজিজ সর্দারের মতো নিবন্ধিত ৬ হাজার ২৯৯ জন জেলে কোনো চালই পাননি। যাঁরা চাল পেয়েছেন, তাঁরাও সন্তুষ্ট নন। চাহিদার তুলনায় এই চাল খুবই সামান্য বলে জানান জেলেরা।

আজ বৃহস্পতিবার রামগতি উপজেলার চর রমিজ এলাকার মো. রফিক মুঠোফোনে প্রথম আলোকে জানান, তাঁদের বাড়িতে আটটি জেলে পরিবার রয়েছে। নদীতে প্রতিদিন মাছ ধরেই তাঁদের সংসার চলে। অন্য কাজ তাঁদের জানা নেই। মাছ ধরা বন্ধ রাখলেও তাঁরা সরকারিভাবে কোনো বরাদ্দ পাননি এখনো। এ কারণে গতকাল বুধবার থেকে তাঁদের অনেকের ঘরে চুলা জ্বলেনি। পরিবার নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন জেলেরা।

রায়পুর উপজেলার মেঘনা নদীর হাজীমারা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদীতে নোঙর করে আছে ট্রলার ও নৌকা। সেগুলো পাহারা দিচ্ছেন একজন করে জেলে। একটি ট্রলারের জেলে মো. সাইফুল (২৭) জানান, এমনিতেই দিন দিন নদীতে মাছ কমে যাচ্ছে। এ কারণে জেলেপরিবারগুলো অভাব অনটনে রয়েছে। এখন ইলিশ ধরার মৌসুমে টানা ২২ দিন নিষেধাজ্ঞা জেলেদের দুঃখ শতগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। যে চাল পেয়েছেন, তা দিয়ে কয় দিন চলবে, সেই ভাবনায় দিন কাটছে তাঁদের।

জেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, জেলেদের জন্য মোট ৯৯৩ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয় এ বছর। ৪৬ হাজার ৪৯ জন নিবন্ধিত জেলের মধ্যে সরকারি পুনর্বাসনের ২৫ কেজি চাল সহযোগিতা পেয়েছেন ৩৯ হাজার ৭৫০ জেলে। আর ৬ হাজার ২৯৯ জন জেলে সম্পূর্ণ সুবিধাবঞ্চিত।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চর রমণী মোহনের জেলে আবদুল মালেক (৪৫) বলেন, ১৫ দিন ধরে তিনি বেকার জীবন কাটাচ্ছেন। সংসারে স্ত্রী ও ছয় ছেলেমেয়ে তাঁর। সরকার থেকে এখন পর্যন্ত তিনি কোনো সহায়তা পাননি। ট্রলারমালিকেরাও কোনো সহযোগিতা দিতে রাজি হচ্ছেন না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, জেলেদের মাছ শিকারে বিরত রাখতে তালিকাভুক্তদের জন্য ২৫ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সহায়তার চাল বিতরণ করা হয়েছে। মাছ ধরা বন্ধে নদীতে সার্বক্ষণিক নজরদারি রয়েছে। মৎস্য বিভাগ, নৌ পুলিশ ও কোস্টগার্ডের যৌথ সমন্বয়ে কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।