৬৮ বছরের পুরোনো যে হাটে বিক্রি হয় কোটি কোটি টাকার শুকনা মরিচ

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জের মোল্যার হাট শুকনা মরিচ বিক্রির পরিচিতি পেয়েছে
ছবি: প্রথম আলো

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার চরকুমারিয়া ইউনিয়নে মোল্যার হাট বসতে শুরু করে ১৯৫৫ সালে। ৬৮ বছরের পুরোনো হাটটি এখন জমজমাট শুকনা মরিচ বিক্রিতে। এটি দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে মরিচ বিক্রির সবচেয়ে বড় হাট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। সপ্তাহে দুই দিন (শনিবার ও বুধবার) হাট বসে, দুই দিনে অন্তত ছয় থেকে আট কোটি টাকার মরিচ কেনাবেচা হয়। মসলা প্রস্তুতকারী বড় বড় প্রতিষ্ঠান এখান থেকে শুকনা মরিচ কেনে।

শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, শরীয়তপুরের অধিকাংশ এলাকা পদ্মা ও মেঘনা নদীবেষ্টিত। প্রতিবছর বর্ষার পানিতে পলি জমে চরাঞ্চলের কৃষিজমি উর্বর হয়। তাই জেলার চরাঞ্চলগুলোয় মরিচ আবাদ করেন কৃষক। চলতি মৌসুমে শরীয়তপুরে ৬ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ করা হয়েছিল। উৎপাদন হয়েছে ৯ হাজার ৯০৬ মেট্টিক টন।

কৃষক জানুয়ারি মাস থেকে চরাঞ্চলের জমিতে মরিচের আবাদ শুরু করেন। মে মাসজুড়ে জমি থেকে লাল রঙের পাকা মরিচ তুলে আনেন কৃষক। তারপর রোদে শুকিয়ে শুকনা মরিচ হয়। জুনের শুরু থেকে ওই মরিচ কৃষক মোল্যার হাটে বিক্রি করতে শুরু করেন। টানা নভেম্বর পর্যন্ত মোল্যার হাটে মরিচের বেচাকেনা চলবে। বর্তমানে প্রতি কেজি শুকনা মরচি বিক্রি হচ্ছে ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকা দামে।

জুনের শুরু থেকে মোল্যার হাটে শুকনা মরিচ বিক্রি শুরু হয়, চলে নভেম্বর পর্যন্ত
ছবি: প্রথম আলো

শুকনা মরিচ বিক্রির হাটকে কেন্দ্র করে মোল্যার হাটে কয়েকটি মসলা ভাঙানোর কল হয়েছে। হালিমা মসলা মিলের মালিক সুরুজ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, এখানকার মরিচের মান ভালো। তাই বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা হাট থেকে মরিচ কিনে মিলে গুঁড়া করেন। এতে এলাকায় কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।

ভেদরগঞ্জের চরসেনসাস এলাকার কৃষক মিজানুর রহমান তিন বিঘা জমিতে মরিচের আবাদ করেছেন। তাতে যে মরিচ উৎপাদিত হয়েছে, তা থেকে ১২০ কেজি মরিচ বিক্রি করার জন্য তিনি গত শনিবার মোল্যার হাটে নিয়ে আসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘১২০ কেজি মরিচ বিক্রি করে ৪২ হাজার টাকা পেয়েছি। দাম বাড়বে আশায় মরিচ রেখে দিয়েছি।’

যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কৃষক, ক্রেতা ও বিক্রেতারা এখানে আসেন। চাঁদাবাজি ও অব্যবস্থাপনা না থাকায় মানুষ এখানে পণ্য বেচাকেনা করতে নিরাপদ বোধ করেন।
মোজাম্মেল হক মোল্যা, চেয়ারম্যান, চরকুমারিয়া ইউপি

মোল্যার হাটের শুকনা মরিচের আড়তদার জাকির মোল্যা প্রথম আলোকে বলেন, শরীয়তপুর ছাড়াও চাঁদপুর ও বরিশালের চরাঞ্চল থেকে এই হাটে মরিচ নিয়ে আসেন কৃষকেরা।

চরকুমারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক মোল্যা প্রথম আলোকে বলেন, ‘৬৮ বছর আগে আমাদের বংশের মুরব্বিরা হাটটি প্রতিষ্ঠা করেন। যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কৃষক, ক্রেতা ও বিক্রেতারা এখানে আসেন। চাঁদাবাজি ও অব্যবস্থাপনা না থাকায় মানুষ এখানে পণ্য বেচাকেনা করতে নিরাপদ বোধ করেন।’

শরীয়তপুর ছাড়াও চাঁদপুর ও বরিশালের চরাঞ্চল থেকে এই হাটে মরিচ নিয়ে আসেন কৃষকেরা
ছবি: প্রথম আলো

শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রবিআহ নূর আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, জেলায় এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে মরিচ উৎপাদন বেশি হয়েছে। দামও ভালো পাচ্ছেন কৃষকেরা। উৎপাদনের ভরা মৌসুমে মোল্যার হাটে সপ্তাহে ছয় থেকে আট কোটি টাকার শুকনা মরিচ কেনাবেচা হয়ে থাকে। ওই হাটের মরিচ বিভিন্ন মসলা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কিনে নেওয়ায় কৃষকও ন্যায্য মূল্য পান।