বাড়ছে ডাকাতি, কমছে মামলা

এনাম মাঝির নৌকাটি সর্বশেষ ডাকাতির কবলে পড়ে শুক্রবার সকালে। ৬০ জন যাত্রী নিয়ে নৌকাটি কুলিয়ারচরের উদ্দেশে দোবাজাল ঘাট ছেড়ে এসেছিল।

প্রতীকী ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার দোবাজাল ঘাট থেকে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরের উদ্দেশে ছেড়ে আসা এনাম মাঝির যাত্রীবাহী নৌকাটি ডাকাতের কবলে পড়ে গত শুক্রবার সকালে। ডাকাতেরা যাত্রীদের সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে পালিয়ে যায়।

এরই মধ্যে দুর্ঘটনার এক দিন পেরিয়ে গেছে। কিন্তু মামলা করতে এনাম মাঝি এখন পর্যন্ত থানায় যাননি।

এনাম মাঝি কেন মামলা করলেন না, এসব বিষয়সহ আরও নানা বিষয় নিয়ে গতকাল শনিবার দুপুরে কথা হয় এনাম মাঝির সঙ্গে। এনাম মাঝির পুরো নাম এনাম মিয়া। দোবাজাল গ্রামের মৃত মঞ্জুর আলীর ছেলে তিনি। এনাম মাঝি বলেন, ‘২০ বছরে কতবার ডাকাতের কবলে পড়তে হয়েছে হিসাব নেই। থানায় গিয়ে কোনোটিরই খুব বেশি সুফল পাইনি। এখন শুরু হয়েছে দুর্ঘটনাস্থলের জলসীমার দায় নিয়ে কয়েক থানা–পুলিশের ঠেলাঠেলি। শেষে মামলা বা ডাকাত গ্রেপ্তার কোনোটাই হয় না। এই যখন নিয়তি, সে কারণে নৌকায় ডাকাতি হলে কাউকে কিছু জানানোর চেয়ে নীরবে মেনে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ মনে করি।’

এনাম মিয়া আরও বলেন, সর্বশেষ তিন মাসের ব্যবধানে তাঁর নৌকায় চার দফা ডাকাতি হয়েছে। কোনোটিই থানা–পুলিশের নজরে আনা হয়নি। না আনার কারণ আগের তিক্ত অভিজ্ঞতা।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এনাম মাঝির নৌকাটি সর্বশেষ ডাকাতির কবলে পড়ে শুক্রবার সকালে। ৬০ জন যাত্রী নিয়ে নৌকাটি কুলিয়ারচরের উদ্দেশে দোবাজাল ঘাট ছেড়ে এসেছিল। ১০টার দিকে ভৈরবের লুন্দিয়া ঘাটে যাত্রী ওঠানামা করার পর কুলিয়ারচরের উদ্দেশে যাওয়ার সময় কুলিয়ারচর ও দোবাজাল এলাকার মাঝামাঝি স্থানে ডাকাতের কবলে পড়ে। এ সময় ডাকাতেরা আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে নৌকার গতি রোধ করে। তবে মুঠোফোন, নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে গেলেও ডাকাতেরা কারও ওপরে বড় ধরনের আঘাত করেনি।

দুই সপ্তাহ আগে নৌকাটি সরাইল উপজেলার রাজাপুর এলাকায়, দুই মাস আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার ডামুরা এবং তিন মাস আগে সরাইলের পানিরস্বর এলাকায় ডাকাতের কবলে পড়ে।

ভৈরব নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. সাইদুর রহমান। এনাম মাঝির নৌকায় ডাকাতি হওয়ার কোনো ধরনের তথ্য তাঁর কাছে নেই বলে জানান তিনি। দুর্ঘটনাস্থলের জলসীমা তাঁর কি না, তা–ও নিশ্চিত নন তিনি।

কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর, বাজিতপুর, দোবাজাল ও ভৈরবের কিছু অংশ নিয়ে দোবাজাল নৌ ফাঁড়ির জলসীমা বিস্তৃত। এনামের নৌকায় ডাকাতির প্রসঙ্গ তুলতেই ফাঁড়ির ইনচার্জ মনিরুজ্জামান বলেন, ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের কাছ থেকে অভিযোগ আসেনি।

মামলায় নৌযান মালিক–শ্রমিকদের অনীহার কারণ জানতে কথা হয় নানা শ্রেণির লোকজনের সঙ্গে। তাঁরা জানালেন, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাওরের নৌপথ অরক্ষিত হয়ে পড়ছে। এখানে ডাকাতি বাড়ছে, বিপরীতে কমছে মামলা।

নৌ পুলিশের মধ্যে ডাকাতির দায় এড়ানোর মানসিকতা প্রকট। অন্যসব অভিযোগের দায় নিতে প্রস্তুত থাকলেও কেবল ডাকাতির দাগ গায়ে মাখতে রাজি নয় পুলিশ। এতে ডাকাতেরা সুবিধা পেয়ে যাচ্ছে।

শুধু তা–ই নয়, এ ক্ষেত্রে হাওরকেন্দ্রিক ডাকাত চক্ররাও বেশ কৌশলী। তারা ডাকাতি করার সময় কয়েক থানা–পুলিশের লাগোয়া জলসীমা এলাকা বেছে নেয়। ডাকাতেরা জানে, ওই সব স্থানে ডাকাতি করা গেলে মামলা নিয়ে জলসীমার বিরোধ হবেই। এতে মামলা হবে না।

হাওরের জলসীমা নিরাপদ রাখার দায়িত্বে থাকা নৌ পুলিশের সরঞ্জামের স্বল্পতাও অপরাধীদের ঠেকাতে না পারার বড় একটি কারণ মনে করা হয়।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌযাত্রী পরিবহন সংস্থা সিলেট জোনের সহসভাপতি মোশারফ হোসেন। মামলায় অনাগ্রহ বড় বিপদ হিসেবে দেখছেন তিনি।

কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নেত্রকোনা ও নরসিংদী জেলা নিয়ে নৌ পুলিশ কিশোরগঞ্জ অঞ্চল। কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের এসপি মোফাজ্জল হোসেন বলেন, সব অপরাধের হয়তো তাৎক্ষণিক বিচার নিশ্চিত করা যায় না। তাই বলে সমস্যাটি থানায় না জানানো বড় ভুল। কিছু প্রতিকূলতা পেরিয়ে হলেও সমাধানে থানামুখী হওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।