রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসক রাজু আহমেদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন

যৌন হয়রানির অভিযোগে চিকিৎসক রাজু আহমেদকে গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। আজ রোববার সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের উপপ্রধান চিকিৎসক রাজু আহমেদকে দ্রুত বহিষ্কার, গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনের সামনে প্যারিস রোডে মানববন্ধন কর্মসূচিতে এ দাবি জানান তাঁরা।

মানববন্ধন শেষে শিক্ষকেরা উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তারের কাছে দুটি স্মারকলিপি দেন। এ সময় উপাচার্য বলেন, যৌন হয়রানির অভিযোগে রাজু আহমেদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠন করার জন্যও বলা হয়েছে। এ ছাড়া অভিযোগ তদন্তের জন্য যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধবিষয়ক অভিযোগ কমিটিকেও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি আজ এই মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে। এতে সংহতি জানিয়ে অংশ নেয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা মহিলা ক্লাব ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। কর্মসূচিতে প্রায় চার শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। এর আগে চিকিৎসক রাজুর দ্রুত বহিষ্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের ফটকে তালা দেন তাঁরা। পরে প্রক্টর, জনসংযোগ প্রশাসক ও ছাত্র উপদেষ্টার উপস্থিতিতে তালা খুলে দেওয়া হয়।
গত সোমবার রাতে রাজশাহী নগরের তালাইমারি এলাকার আমেনা ক্লিনিকে এক শিশুকে যৌন হয়রানি করার অভিযোগ ওঠে রাজু আহমেদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় পরদিন ভুক্তভোগী শিশুটির মা বাদী হয়ে নগরের বোয়ালিয়া মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন।

মানববন্ধনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক মাহবুবা কানিজ বলেন, ‘ভাষার ব্যবহার, হয়রানিমূলক মন্তব্য, নানা রকম কুৎসা রটনা, নারী শিক্ষক-শিক্ষার্থী,  কর্মকর্তা কর্মচারীর বিরুদ্ধে অশ্লীল মন্তব্য—এগুলো সবই যৌন হয়রানি ও যৌন নিপীড়নের পর্যায়ে পড়ে। এই যৌন নিপীড়নের সংজ্ঞাকে আমরা শুধু ধর্ষণের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখছি, তার বাইরে নিতে চাইছি না এবং নিপীড়ককে নিপীড়ক বলতে দ্বিধা বোধ করছি। এটা খুবই পরিতাপের বিষয়। রাজু এবং তাঁকে সহায়তাকারী কিছু চিকিৎসক ভুক্তভোগী এবং তার মাকে সামাজিকভাবে হেয় করার চেষ্টা করছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার না করলে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে। আর যাঁরা পক্ষাবলম্বন করছেন, তাঁরাও সমদোষে দুষ্ট। নিপীড়নকারীদের প্রশ্রয়দাতাদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে।’

কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মাসুসুল হাসান খান বলেন, তিনি অত্যন্ত বেদনাদায়ক অবস্থায় এখানে দাঁড়িয়েছেন। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কিছু হতে পারে না। আজ ঘটনার ছয় দিন হয়ে গেল, এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে না পারায় বারবার একই ঘটনা ঘটছে। তবে শুধু শাস্তি দিয়ে নয়, তাঁদের সামাজিকভাবে বর্জন করতে হবে।

সমাপনী বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি সফিকুন্নবী সামাদী বলেন, ‘এই কর্মসূচিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের মানববন্ধন হয়েছে। মোদ্দাকথা, আমরা অভিযুক্ত রাজু আহমেদকে এই ক্যাম্পাসে আর চাই না।’ আজকের মধ্যে সাসপেন্ড অর্ডার না এলে চিকিৎসা সেন্টার ঘেরাও করার হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বোরাক আলীর সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক মোবাররা সিদ্দিকা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন, শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ, আইন বিভাগের সভাপতি হাসিবুল আলম প্রধান, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রাশেদা খালেক, রাজশাহী জেলা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অঞ্জনা সরকার প্রমুখ।