এবার ব্রহ্মপুত্রের পেটে গেল চিলমারীর নয়ারহাট বাজার
এবার ভাঙনে ব্রহ্মপুত্র নদের পেটে চলে গেছে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের একমাত্র বড় বাজার। গতকাল সোমবার রাত থেকে আজ মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত বাজারের শেডঘর, ৭টি দোকান ও ২০টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন।
ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়ায় তিন দিন আগে ভাঙন শুরু হয়। এতে গতকাল দক্ষিণ খাউরিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের একমাত্র পাকা ভবনের অর্ধেক নদের পেটে চলে যায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা বলে ভাঙন রোধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহবুবুর রহমান।
তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গত বছর ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন দেখা দিলে সেখানে জিও ব্যাগ ফেলা হয়। এ বছর হঠাৎ নদের পানি বেড়ে যাওয়ায় ভাঙন প্রবল আকার ধারণ করে। গতকাল ওই ইউনিয়নের একটি স্কুল অ্যান্ড কলেজ নদে বিলীন হয়েছে। আজ ভোররাতে বাজারের শেড ঘরটি ভেঙে নদে চলে যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নয়ারহাট বাজারটি ইউনিয়নের একমাত্র বড় বাজার। এ বাজারে প্রায় ২০ বছর আগে নির্মাণ করা একটি শেডঘর ও অর্ধশতাধিক দোকানঘর ছিল। সম্প্রতি ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন দেখা দিলে বাজারটি ঝুঁকিতে পড়ে। বাজারের ব্যবসায়ীরা তাঁদের দোকানগুলো অন্যত্র সরিয়ে নেন। তবে শেডঘরটি সরকারি সম্পত্তি হওয়ায় সেটি স্থানান্তরের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়। কিন্তু উপজেলা প্রশাসন শেডঘরটি স্থানান্তরের ব্যবস্থা নেয়নি। ভাঙনে শেডঘরটির একাংশ নদের পেটে যায়।
নয়ারহাট বাজারের ব্যবসায়ী মো. শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাজারের শেডঘরে একটি কাপড়ের দোকান ছিল। দোকান থেকে মোটামুটি যা আয় করতাম, তা দিয়ে চলত আটজনের সংসার। গত কয়েক দিনে বাজারটি ভাঙনের ঝুঁকিতে ছিল। আজ ভোররাতে দোকানটি নদের পেটে যায়। ঈদের আগে কাপড়ের দোকানে বেচাবিক্রি বেশি হয়। দোকান ভেঙে যাওয়ায় লোকসানে পড়ে গেলাম। সামনের দিনগুলোতে কীভাবে চলব, আল্লাহ জানেন।’
বাজারের আরেক ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাজারে আমার বিকাশ এজেন্ট পয়েন্ট ও ফ্লাক্সিলোডের দোকান ছিল। ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে এ মাসে দোকানটি অন্য জায়গায় সরিয়ে নিতে হয়েছে। এ বাজারে ব্যবসা ভালো হতো। নদের ভাঙনে আমার ব্যবসার ক্ষতি হয়েছে।’
মঙ্গলবার সকালে নয়ারহাট ইউনিয়নের ওই বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, বাজারের একমাত্র শেডঘরটির একাংশ নদগর্ভে চলে গেছে। নদের ভাঙনের কারণে বাজারের দোকান সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সরকারি শেডঘরটির ইট ও প্রয়োজনীয় মালামাল স্থানীয় লোকজনের অনেককেই খুলে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। এ ছাড়া ভাঙনের কারণে নদে ভেঙে পড়েছে পল্লী বিদ্যুৎ-সংযোগ খুঁটি।
নয়ারহাট ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আবদুল হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, নয়ারহাট বাজারটি ইউনিয়নের সবচেয়ে পুরোনো বাজার। সপ্তাহের প্রতিদিন চালু থাকার পাশাপাশি শুক্র ও মঙ্গলবার এখানে বাজার বসত। গতকাল থেকে ব্রহ্মপুত্র ভাঙনে বাজারের সাতটি দোকান ও শেডঘরটি ভেঙে গেছে। এ ছাড়া বাজারের পাশে প্রায় ২০টি বসতবাড়ি এক দিনের ব্যবধানে নদে বিলীন হয়ে গেছে। বিদ্যুতের খুঁটি নদে ভেঙে পড়ায় বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।