বাড়িতে ১৫ মৌচাক, কখনো হুল ফোটায়নি কাউকে
এক বাড়িতে একটি-দুটি নয়, মৌমাছির ১৫টি চাক। বাড়ির দ্বিতীয়তলার বারান্দায় ১৪টি আর সিঁড়িঘরে একটি মৌচাক ঝুলে আছে। বাড়িতে ভোঁ ভোঁ করে উড়ছে শত শত মৌমাছি। কখনো চাকে বসছে, কখনো মধু আহরণের জন্য বেরিয়ে পড়ছে। এর মধ্যেই বাড়ির ও বাইরের লোকজন চলাচল করছে। হুল ফোটানোর কোনো ঘটনা ঘটেনি। যেন মানুষ আর মৌমাছির মিতালি এই বাড়িতে!
জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার পাঁচগাছি গ্রামের সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হবিবর রহমানের বাড়িতে এমন দৃশ্য দেখা যায়। মৌমাছির চাক দেখতে প্রতিদিন এই বাড়িতে ভিড় করেন লোকজন।
সম্প্রতি হবিবর রহমানের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, দোতলা বাড়ির সিঁড়িতে প্রথমে একটি মৌচাক। দ্বিতীয় তলার বারান্দায় ছোট–বড় ১৪টি মৌচাক।
বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৪ থেকে ১৫ বছর আগে হবিবর রহমান বাড়িটি নির্মাণ করেন। প্রথমে বাড়ির পাশে মৌমাছিরা চাক করেছিল। তখন পাখির আনাগোনা এবং মানুষের ছোড়া ঢিলে মৌমাছির চাক নষ্ট হয়। এরপর কয়েক বছর ধরে হবিবর রহমানের বাড়ির ভেতরে চাক করে মৌমাছির দল।
হবিবর রহমান বলেন, ‘আমাদের বাড়িতে মৌমাছি চাক করেছে। অনেক আগে থেকে মৌমাছি চাক করত। তবে এবার একটু বেশি চাক করেছে। দ্বিতীয় তলায় ১৪টি ও বারান্দার সিঁড়িতে ১টি মৌচাক আছে। আমরা বাড়ির লোকজন মৌচাকের নিচ দিয়ে চলাচল করি। মৌমাছিরা কাউকে কামড়ায় না। বাইরের লোকজন যাঁরা মৌচাক দেখতে আসেন, তাঁদেরও কামড়ায় না। মৌমাছি আমাদের ক্ষতি করে না, আমারও মৌমাছির ক্ষতি করি না। চাকে হাত দিলে মৌমাছিরা সরে যায়। মধু কেটে নেওয়া যাবে। তবে মধু কাটা হয় না। যত দিন মৌমাছি থাকবে, চাক কেটে মধু নেব না। শীতের সময় খুব কুয়াশা লাগলে মৌমাছিরা চাকে থাকে। তখন বাইরে বের হয় না। রোদের সময় মৌমাছিরা বাইরে গিয়ে মধু আহরণ করে।’
পাঁচবিবির আওলাই গ্রামের সজীব হোসেন বলেন, ‘এক বাড়িতে অনেকগুলো মৌচাক আছে শুনে দেখতে এসেছি। মৌচাক দেখে মুগ্ধ হয়েছি। মৌচাকের নিচ দিয়ে চলাচল করলাম। মাথার ওপর দিয়ে মৌমাছিরা ভোঁ ভোঁ শব্দে উড়ে বেড়াল। তবে কামড়ায়নি।’
পাঁচবিবি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. লুৎফর রহমান বলেন, মৌমাছি ফুলজাতীয় ফসলের পরাগায়ন করে। এতে ফুলের খেতের ফসল ভালো হয়। মৌমাছির সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণে ফসলে পরাগায়ন তেমন হচ্ছে না। মৌমাছিকে বিরক্ত না করলে মৌমাছিও কাউকে কামড়ায় না।
পাঁচবিবি উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. নিয়ায কাযমীর রহমান বলেন, মৌমাছিদের কেউ বিরক্ত করলে তারা ঝাঁকে ঝাঁকে এসে মানুষ, গবাদিপশু কিংবা পাখিকে হুল ফুটিয়ে দেয়। বেশি হুল ফুটালে চিকিৎসা না নিলে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু হতে পারে।