খুলনার কয়রা উপজেলার সুন্দরবনঘেঁষা মহেশ্বরীপুর এলাকার রাস্তার পাশের বটগাছটি খানিকটা ছায়া বিছিয়ে দিয়েছে। তীব্র রোদ থেকে বাঁচতে একপাল গরু আশ্রয় নিয়েছে সেখানে। গরুর রাখাল অরবিন্দ মণ্ডল পাশে দাঁড়িয়ে গামছা দিয়ে ঘামে ভেজা মুখ মুছে নিতে নিতে বললেন, ‘এক সপ্তাহ ধইরে বড্ড গরম। রইদে বুকের ছাতি ফাইটে যাচ্ছে। গরুগুলো রইদে ঘাস না খেয়ে গাছের তলায় দাঁড়িয়ে আছে। এই রইদে গরু চরানো বড্ড কঠিন কাজ।’
আজ বৃহস্পতিবার যখন অরবিন্দ মণ্ডলের সঙ্গে কথা হয়, তখন ঘড়ির কাঁটায় সময় দুপুর দেড়টা। মাথার ওপর থেকে সূর্য আগুনের হলকার মতো রোদ ঢেলে চলেছে। রাস্তা দিয়ে তখন আরেক ব্যক্তি ছাতা মাথায় হেঁটে যাচ্ছিলেন। বটগাছের নিচে তিনিও দাঁড়ালেন। পূর্বপরিচিত অরবিন্দের কাছে পানি খেতে চাইলেন। অরবিন্দ গাছের ডালে ঝুলিয়ে রাখা ব্যাগ থেকে একটি প্লাস্টিকের পানির বোতল বের করে এগিয়ে দিলেন। পানি খানিকটা মুখে ছিটিয়ে লোকটি বললেন, ‘মনে হচ্ছে গায়ে কেউ আগুন লাগাই দিছে। মুখটা জ্বলতিছে। বোতলের পানি যে হাতে-মুখে দিছি, পানিডাও যেন গরমে আগুন হইয়ে গেছে।’
দুই সপ্তাহ ধরে খুলনার সুন্দরবন–সংলগ্ন উপকূলীয় অঞ্চলে বয়ে যাচ্ছে মাঝারি তাপপ্রবাহ। এতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। বিশেষ করে গরমের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন খেটে খাওয়া লোকজন। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আরও কয়েক দিন এ ধরনের তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে।
কয়রা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আজিজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, আজ বিকেল ৪টায় কয়রায় ৩৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল বুধবার দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, তার আগের দিন ছিল ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এখন চলছে মাঝারি তাপপ্রবাহ। আগামী কয়েক দিন এ ধরনের তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে।
আজ বিকেল ৪টার দিকে সুন্দরবন–সংলগ্ন কয়রার শাকবাড়িয়া নদীর তীরে গিয়ে দেখা যায়, কেওড়াগাছের ছায়ায় নৌকা বেঁধে বসে আছে বেশ কয়েকজন। সবারই ঘামে-ক্লান্তিতে জেরবার অবস্থা। তাঁদের মধ্য থেকে আমিরুল ইসলাম নামের একজন বলেন, ‘মানুষ ভাবে, সুন্দরবনের মধ্যে মনে হয় গরম কম; কিন্তু আসলে বনে গরম বেশি। ভেতরে কোনো বাতাস নেই। আবার নোনা পানিরও একটা গরম আছে। গত কয়েক দিন মনে হচ্ছে, গরম আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।’
উপকূল ও সুন্দরবন সংরক্ষণ আন্দোলনের সদস্যসচিব মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, লবণাক্ততার কারণে কয়রায় সাধারণত গরমের তীব্রতা বেশি অনুভব হয়। অসহ্য এই গরমে বেশি বেকায়দায় পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষগুলো। খাল, বিল, নদী, নালার পানিও তীব্র গরম। এই গরমে পশুপাখিদেরও কষ্টের সীমা নেই। মানুষ এখন বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছে।