বাঘারপাড়ায় নালা তৈরি করতে কাটা হচ্ছে বড় তিনটি রেইনট্রি

বাঘারপাড়া উপজেলা পরিষদের সামনে নিজের লাগানো গাছের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন শরিফুল ইসলাম। পৌরসভার নালা নির্মাণের জন্য গাছটি কাটা হচ্ছে। বুধবার বিকেলে
ছবি: প্রথম আলো

যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলায় বড় তিনটি রেইনট্রিগাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। বাঘারপাড়া পৌরসভার নালা তৈরির জন্য জেলা পরিষদের মালিকানাধীন ৩০–৩৫ বছর বয়সী গাছ তিনটি কাটা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

এর আগে গত মাসে যাত্রীছাউনি নির্মাণের জন্য মৃত একটি রেইনট্রিসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাঁচটি গাছ কাটা হয়।

যশোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল প্রথম আলোকে বলেন, যাত্রীছাউনি ও নালা নির্মাণের জন্য পৌরসভার নিজস্ব কোনো জায়গা নেই। এ জন্য জেলা পরিষদের জায়গায় তাঁদের যাত্রীছাউনি ও নালা নির্মাণ করতে হচ্ছে। কিন্তু গাছগুলোর কারণে সেটি সম্ভব হচ্ছিল না। পৌরসভার অনুরোধে গত মাসে মরা একটি রেইনট্রি ও বিভিন্ন প্রজাতির চারটি গাছ কাটা হয়। সেগুলো বাঘারপাড়ায় জেলা পরিষদের ডাকবাংলো চত্বরে রাখা হয়েছে। এখন যেসব গাছ কাটা হচ্ছে, তার ডালপালা বিক্রি করে গাছ কাটার খরচ দেওয়া হচ্ছে। গাছগুলো ডাকবাংলো চত্বরে রাখা হচ্ছে। পরে দরপত্রের মাধ্যমে বিক্রি করা হবে।

ছায়া দেওয়া গাছ কাটায় পথচারীরা বঞ্চিত হবেন কি না, জানতে চাইলে সাইফুজ্জামান আরও বলেন, ‘গাছগুলো ছায়া দিত ঠিকই। কিন্তু পৌরসভার অনুরোধে গাছগুলো কাটতে হচ্ছে।’

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, বাঘারপাড়া উপজেলা সদরের চিত্রা নদীর পাড় থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পর্যন্ত বাঘারপাড়া-নারিকেলবাড়িয়া সড়কের পাশে চারটি রেইনট্রিগাছ লাগান স্থানীয় চারজন ব্যক্তি। এর মধ্যে দুটি গাছ উপজেলা পরিষদের মূল ফটকের সামনে, একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে এবং একটি গাছ চিত্রা নদীর পাড়ে লাগানো হয়। গাছ চারটি বেশ বড়। দূরদূরান্ত থেকে উপজেলা পরিষদ ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা লোকজন সেই গাছের ছায়ায় বসে জিরিয়ে নিতেন। গাছগুলো কেটে ফেলায় ছায়া থেকে বঞ্চিত হবেন পথচারীরা।

এলাকাবাসী জানান, চিত্রাপারের গাছটি বছরখানেক আগে শুকিয়ে যায়। গত মাসে গাছটি কেটে ফেলা হয়। সেই সময় জাম, কদম, বকুলসহ পাশের আরও চারটি গাছ কাটা হয়। গাছগুলোর মধ্যে শুধু রেইনট্রিগাছের গুঁড়িটি জেলা পরিষদের ডাকবাংলো চত্বরে রাখা। সর্বশেষ গত সোমবার থেকে জীবিত তিনটি রেইনট্রিগাছ কাটা শুরু হয়। আজ দুটি কাটা শেষ হয়েছে। বাকি গাছটির ডালপালা কাটা হয়েছে। কাল গাছ কাটা শেষ হবে।

বাঘারপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে দাঁড়িয়ে আছে গাছটি। পৌরসভার নালা নির্মাণের জন্য বৃহস্পতিবার গাছটি কাটা হবে। বুধবার বিকেলে
ছবি: প্রথম আলো

গাছ কাটা শ্রমিকদের সরদার আবদুল হান্নান সরদার বলেন, জেলা পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও বাঘারপাড়া পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম তাঁকে গাছ কাটার কাজটি দিয়েছেন। তাঁরাই তাঁকে টাকা দিচ্ছেন। দিনে তাঁর ৫০০ ও শ্রমিকদের ৭০০ টাকা করে মজুরি। সোমবার ৭ জন, মঙ্গলবার ৯ জন ও আজ ১৫ জন শ্রমিক নিয়োগ করেছেন। দুটি গাছ পুরো কাটা হয়েছে, একটির ডালপালা কাটা হয়েছে। কাল বাকিটা কাটা হবে। এর আগে গত মাসে তিনি শ্রমিক দিয়ে পাঁচটি গাছ কেটে দিয়েছেন।

জানতে চাইলে বাঘারপাড়া পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আরে ভাই, জেলা পরিষদ গাছ কাটছে। আপনি জেলা পরিষদের সিইওর সঙ্গে কথা বলেন।’

উপজেলা পরিষদের মূল ফটকের পাশে একটি গাছ লাগিয়েছিলেন উপজেলার মহিরান গ্রামের চায়ের দোকানদার শরিফুল ইসলাম (৪৮)। ওই গাছটির নিচে ছিল তাঁর চায়ের দোকান। কয়েক বছর আগে তিনি দোকান অন্যত্র সরিয়ে নেন।

গাছ কাটার খবর শুনে আজ গাছটির কাছে এসেছিলেন শরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘৩৩ বছর আগে গাছটি লাগিয়েছিলাম। ছায়া দিত। গাছের নিচে মানুষ বসত। গাছটি কেটে ফেলায় অন্তর কাঁদছে। গাছটাকে রক্ষা করতে পারলাম না।’