তাপপ্রবাহে কষ্ট বেশি অন্তঃসত্ত্বা নারীদের 

অন্তঃসত্ত্বা নারীরা এমনিতেই একটু বেশি গরম অনুভব করেন। টানা তাপপ্রবাহে অসুস্থ হয়ে অনেক অন্তঃসত্ত্বা নারী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।

অন্তঃসত্ত্বা নারীপ্রতীকী ছবি

গাজীপুর সদরের বাড়িয়া ইউনিয়নের বলদা গ্রামের রিমিন আক্তার প্রায় সাড়ে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এই বিশেষ সময়ে নানা জটিলতার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে তাঁকে। এর মধ্যে প্রচণ্ড গরমে গত বুধবার হঠাৎ তীব্র মাথাঘোরা শুরু হয় তাঁর। সঙ্গে বমি ভাব। একপর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তাঁকে দ্রুত নেওয়া হয় শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসায় স্বাভাবিক হন তিনি।

বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতালের সামনের একটি ফার্মেসিতে কথা হয় রিমিনের স্বামী মো. ইমরানের সঙ্গে। চিকিৎসকের বরাত দিয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রিমিন এমনিতেই কিছুটা দুর্বল। এর মধ্যে তাপপ্রবাহে তাঁর শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। সেখান থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তবে সময়মতো চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ায় কোনো সমস্যা হয়নি। ইমরান বলেন, ‘আমাদের বাড়ি গ্রামে। সেখানে প্রচুর লোডশেডিং হয়। এর মধ্যে গত কয়েক দিনের গরমে আমার স্ত্রীর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।’

সম্প্রতি দেশজুড়ে চলমান তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে মানুষ। এর ভেতর বেশি সমস্যায় পড়ছেন অন্তঃসত্ত্বা নারীরা। ফলে রিমিনের মতো অসুস্থ হয়ে অনেক অন্তঃসত্ত্বা নারী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।

চিকিৎসকেরা বলেন, অন্তঃসত্ত্বা নারীরা এমনিতেই একটু বেশি গরম অনুভব করেন। গরমকালে তাঁদের এ কষ্ট আরও বেড়ে যায়। অতিরিক্ত গরমের কারণে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। এ সময় মাথাঘোরা, বমি বমি ভাব, ঠোঁট-মুখ শুকিয়ে যাওয়াসহ নানা রকম জটিলতা দেখা দেয়।

শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডের চিকিৎসক মরিয়ম আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘গরমের কারণে কিছুদিন ধরে আমরা প্রচুর রোগী পাচ্ছি। এদের মধ্যে বেশির ভাগই পানিশূন্যতায় ভুগছেন। কারও কারও ডায়রিয়াও দেখা দিচ্ছে। আমরা আমাদের দিক থেকে যা যা করণীয়, তা–ই করছি।’

বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে গিয়ে রোগীর ভিড় দেখা যায়। বারান্দা ও ওয়ার্ড মিলিয়ে রোগীর সংখ্যা প্রায় ৩০। এর মধ্যে কারও সন্তানের জন্ম হয়েছে, কেউ সন্তান জন্মের অপেক্ষায়, কেউ বা এসেছেন অন্যান্য রোগের চিকিৎসা নিতে। মাথার ওপর ফ্যান ঘুরছে। কিন্তু তারপরও গরমে সবার হাঁসফাঁস অবস্থা। গরম থেকে বাঁচতে কেউ কেউ ব্যবহার করছিলেন সঙ্গে আনা হাতপাখা।

কোনাবাড়ী রাইস মিল এলাকার বাসিন্দা মোসাম্মত নাসরীন আক্তার সোমবার কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন। এখন তিনি মোটামুটি সুস্থ। নাসরীন বলেন, প্রচণ্ড গরমে এক সপ্তাহ ধরেই নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। 

অতিরিক্ত গরমের কারণে মঙ্গলবার ডায়রিয়া শুরু হয় অন্তঃসত্ত্বা সালমা আক্তারের। স্থানীয় ফার্মেসি থেকে ওষুধ খাওয়ার পরও কাজ হচ্ছিল না। একপর্যায়ে তিনিও চিকিৎসা নিতে আসেন হাসপাতালে। দুই দিনের চিকিৎসা শেষে বৃহস্পতিবার বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।

গাইনি ওয়ার্ডের নার্স মোসাম্মত মাহমুদা প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই গরমে রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে আমরাই ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছি। অন্তঃসত্ত্বা নারীদের বিষয়টি আরও স্পর্শকাতর। হাসপাতালে থেকেও গরমে অনেকে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে।’