নাটোর জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের নেপথ্যে

এবার নাটোর জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ ও বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের ভরাডুবি হয়েছে। বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবী ঐক্য পরিষদ সভাপতি পদে প্রার্থী দেয়নি। তবু ১০টি পদের মধ্যে ওই পদসহ ৭টিতেই তাদের পরাজয় হয়েছে।

জেলা আইনজীবী সমিতির অন্তত ১০ জন সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গঠনতন্ত্র মোতাবেক নাটোর জেলা আইনজীবী সমিতি একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। তবে প্রথা অনুসারে, আওয়ামী লীগ ও তাদের সমমনা দলগুলোর আইনজীবীদের নিয়ে সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের ব্যানারে এবং বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর আইনজীবীদের নিয়ে আইনজীবী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসছে। তবে দলগুলোর সম্মিলিত এই অবস্থানের বাইরেও বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম নামের দল দুটির আলাদা সংগঠনও আছে।

আইনজীবী সমিতির ২০ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ১০টি পদে প্রার্থী মনোনয়ন দিতে গিয়ে দুটি জোটই জটিলতায় পড়ে। বিএনপি-সমর্থিত ঐক্য পরিষদের দুই জ্যেষ্ঠ সদস্য গুরুতর অসুস্থ থাকায় সভাপতি পদে কাউকেই মনোনয়ন দিতে পারেনি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত সমন্বয় পরিষদ বারবার জোটের সভা করেও সভাপতি পদে একক প্রার্থী মনোনয়ন দিতে ব্যর্থ হয়। তাদের আগের বারের নির্বাচিত সভাপতি আবু আহসান আবার একই পদে প্রার্থিতা দাবি করেন। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক পদে একাধিকবার নির্বাচিত প্রসাদ কুমার তালুকদারকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য চাপ আসতে শুরু করে। স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের হস্তক্ষেপেও সভাপতি পদে তাঁরা একক প্রার্থী দিতে ব্যর্থ হন। শেষ পর্যন্ত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ ও বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের ব্যানারে সভাপতি পদে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হয় প্রসাদ কুমার তালুকদারকে। পাশাপাশি বর্তমান সভাপতি আবু আহসান একই পদে তাঁর প্রার্থিতা অটুট রাখেন। তিনি নিজেকে সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি প্রার্থী হিসেবে লিফলেট বিতরণ করেন। নির্বাচনী প্রচারণায় সমন্বয় পরিষদের নেতারা দৃশ্যত বিভক্ত হয়ে পড়েন। এর প্রভাব পড়তে শুরু করে পুরো প্যানেলে।

এমন পরিস্থিতিতে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের নেতারা সভাপতি পদে নিজেদের প্রার্থী না দিয়ে ভেতরে-ভেতরে বর্তমান সভাপতি আবু আহসানকে সমর্থন দেন। তাঁরা তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের প্রকাশ্যেই আবু আহসানকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। এরই ধারাবাহিকতায় ভোট গণনা শেষে সভাপতি পদে আবু আহসান বড় ব্যবধানে জয়ী হন। তিনি ভোট পান ১৬২টি, অন্যদিকে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত সমন্বয় পরিষদের প্রার্থী প্রসাদ কুমার তালুকদার পান ১২২টি ভোট। এ ছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদে বিএনপি-সমর্থিত ঐক্য পরিষদের প্রার্থী মো. শরীফুল হক ১৭০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী সমন্বয় পরিষদের জাহাঙ্গীর হোসেন পান ১১৪ ভোট। বাকি আটটি পদের পাঁচটিতে বিএনপি ও তিনটিতে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হন।

সমন্বয় পরিষদের প্রার্থী জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনৈক্যই আমাদের ডুবিয়েছে। জোটগতভাবে ভোটাররা ভোট দিলে আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত ছিল।’
ঐক্য পরিষদের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক শরিফুল হক বলেন, ‘সভাপতি পদ নিয়ে সমন্বয় পরিষদে ঝামেলা ছিল সত্য। আমরাও কৌশলগতভাবে এগিয়েছি। ভোটাররাও তাঁদের সুচিন্তিত মতামত দিয়েছেন। সবার জন্য কাজ করাই আমার প্রধান লক্ষ্য।’

সভাপতি পদে নির্বাচিত আবু আহসান টগর বলেন, ‘সমন্বয় পরিষদ সভাপতি পদে জোটের একক প্রার্থী দিতে পারেনি, এটা জোটের ব্যর্থতা। এরপরও ভোটাররা আমাকে নির্বাচিত করেছেন। ধরে নেব, সবাই আমাকে ভোট দিয়েছেন। এখন আমি সবাইকে নিয়ে আইনজীবী সমিতির উন্নয়নে কাজ করতে চাই।’