হাত বেঁধে ও মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে নির্যাতন করা হতো শিশু আয়েশাকে, সৎমা গ্রেপ্তার

গ্রেপ্তার
প্রতীকী ছবি

শিশু আয়েশাকে (২) সংসারে রাখতে চাননি সৎমা পারভীন সুলতানা। আয়েশাকে প্রায়ই তিনি মারধর করতেন। তার দুই হাত বেঁধে, মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে নির্যাতন করতেন।

মুঠোফোনে সেসব নির্যাতনের ছবি তুলেছেন পারভীন। এমন নির্মম নির্যাতনে অবশেষে আয়েশা মারা গেছে। যশোর শহরের খোলাডাঙ্গা এলাকার এ ঘটনায় সৎমা পারভীনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পারভীনকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তাঁর মুঠোফোনের ছবি দেখে এসব তথ্য জানিয়েছে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ।

নিহত আয়েশা আক্তার খোলাডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা ওয়াসকুরুনি ওরফে পিন্টুর মেয়ে। গ্রেপ্তার পারভীন সুলতানা ওয়াসকুরুনির দ্বিতীয় স্ত্রী। মঙ্গলবার আদালতের মাধ্যমে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেছে পুলিশ।

গত শনিবার অচেতন অবস্থায় আয়েশাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান পারভীন সুলতানা। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক আয়েশাকে মৃত ঘোষণা করেন। আয়েশার মাথা, মুখ, পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। ওই দিন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আয়েশার বাবা ওয়াসকুরুনি ও সৎমা পারভীন সুলতানাকে কোতোয়ালি থানায় নেওয়া হয়। তাঁরা দুজনই দাবি করেন, আয়েশাকে কেউ আঘাত করেননি। পড়ে গিয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ ওই দম্পতিকে ছেড়ে দেয়। পরে সোমবার পারভীন সুলতানাকে আটক করে থানায় নেয় পুলিশ।

এ সম্পর্কে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘চিকিৎসকের কাছ থেকে আয়েশাকে নির্যাতনের বিষয়ে আমরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হই। পরে শিশুটির বাবাকে মামলা করতে বলি। কিন্তু তিনি মামলা করতে রাজি হননি। কারণ, আয়েশাকে নির্যাতন করার বিষয়ে তিনি সব জানতেন। মঙ্গলবার কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক জয়ন্ত সরকার বাদী হয়ে পারভীনকে আসামি করে মামলা করেন।
ওসি আবদুর রাজ্জাক আরও বলেন, সৎমেয়েকে সংসারে রাখতে চাননি পারভীন।

এ কারণে দুই বছরের শিশু আয়শাকে প্রতিনিয়ত মারধর করতেন তিনি। শুধু তা–ই না, মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে ও দুই হাত বেঁধে শিশুটিকে নির্যাতন চালানো হতো। অবশেষে নির্যাতনেই শিশুটি নিহত হয়েছে। শিশুটির হাত বেঁধে নির্যাতনের ছবি পারভিন মুঠোফোনে সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন। ওই ছবি দেখে ও প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নির্যাতনের বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে।

থানা-পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আয়েশার মায়ের নাম জান্নাতুল। ৮-১০ বছর আগে ওয়াসকুরুনি ও জান্নাতুলের বিয়ে হয়। আয়েশা ছাড়াও তাঁদের আরেকটি ছেলে রয়েছে। ওয়াসকুরুনি ঢাকায় পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। সেখানে পারভীনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিষয়টি জানাজানি হলে ওয়াসকুরুনির সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটে জান্নাতুলের।

২০১৮ সালে ওয়াসকুরুনি ও পারভীন বিয়ে করেন। তখন থেকে তাঁরা যশোর শহরের খোলাডাঙ্গা এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। পাঁচ মাস আগে জান্নাতুল তাঁদের দুই সন্তান আয়েশা ও তার বড় ভাইকে ওয়াসকুরুনির কাছে রেখে যান। তখন থেকে পারভীন তাদের ওপর অত্যাচার শুরু করেন।