আদালতকক্ষে বিচারককে হুমকি, আটকের পর মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেলেন যুবদল কর্মী

সোলায়মান খানছবি: সংগৃহীত

শরীয়তপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র সহকারী জজ ও জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা খালেদ মিয়াকে আদালতকক্ষে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে আটক হয়েছিলেন যুবদলের এক কর্মী। তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে মামলার আবেদনও করেছিলেন ওই বিচারক। পরে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের হস্তক্ষেপে ক্ষমা চেয়ে মুচলেকা দেওয়ার পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

আজ রোববার শরীয়তপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবনের দ্বিতীয় তলায় জেলা লিগ্যাল এইড কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। বিচারককে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে আটক হওয়া ওই ব্যক্তির নাম সোলায়মান খান (৩৫)। সদর উপজেলার দেওভোগ গ্রামের এই বাসিন্দা যুবদলের কর্মী ছিলেন বলেন যুবদলের নেতারা নিশ্চিত করেছেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, দুপুরে জেলা লিগ্যাল এইড কার্যালয়ে নিজের দায়িত্ব পালন করছিলেন সিনিয়র সহকারী জজ খালেদ মিয়া। একটি দেনমোহর–সংক্রান্ত মামলার শুনানি চলছিল তাঁর আদালতে। ওই মামলার একটি পক্ষের সঙ্গে সেখানে উপস্থিত ছিলেন যুবদল কর্মী সোলায়মান খান। বিচারক আদেশ দেওয়ার সময় সোলায়মান খান উত্তেজনাপূর্ণ মন্তব্য করে সহকারী জজ খালেদ মিয়াকে হুমকি দেন। এরপর আদালত পুলিশকে ডেকে সোলায়মানকে আটক করার নির্দেশ দেন ওই বিচারক। পুলিশ বেলা দেড়টার দিকে তাঁকে আটক করে আদালতের হাজতখানায় আটক রাখেন।

সূত্র আরও জানায়, বিকেলে সহকারী জজ খালেদ মিয়া বাদী হয়ে একটি মামলার আবেদন করেন। বিকেলে আবেদনটি অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট চাঁদনী রুপমের আদালতে পাঠানো হয়। এরপরই বিএনপিপন্থী আইনজীবী ও বিএনপি ও যুবদলের স্থানীয় নেতারা সোলায়মানকে ছাড়িয়ে নিতে তৎপর হন। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে সোলায়মানকে সহকারী জজ খালেদ মিয়ার কক্ষে আনা হয়। সেখানে বিএনপিপন্থী আইনজীবী ও বিএনপির নেতাদের উপস্থিতিতে সোলায়মান ওই সহকারী জজের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চান। ‘এরপর এমন আচরণ আর কখনো করবেন না’ জানিয়ে মুচলেকা দিলে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সন্ধ্যা সাতটার দিকে সোলায়মানকে তাঁর স্বজন ও বিএনপির নেতারা আদালত থেকে নিয়ে যান।

হাজতখানা থেকে মুক্ত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে সোলায়মানের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এমনকি বিএনপিপন্থী আইনজীবীরাও এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তাঁকে ছাড়াতে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সঙ্গে আদালতে এসেছিলেন জেলা যুবদলের সভাপতি আরিফ মোল্লা।

তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি ভুল-বোঝাবুঝির কারণে সোলায়মানকে আটক করেছিল পুলিশ। পরে আমাদের অনুরোধে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।’ এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, সোলায়মান যুবদলের কোনো কমিটিতে নেই। তবে তিনি যুবদলের কর্মী। তাঁদের সঙ্গে রাজনীতি করেন।

জানতে চাইলে জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি মনিরুজ্জামান দীপু বলেন, ‘বিষয়টি আমার দৃষ্টিগোচর হয়নি। আদালতের আইনজীবীদের কোনো পক্ষও বিষয়টি আমাকে জানাননি। সাংবাদিকদের কাছেই প্রথম শুনেছি।’

আদালত পুলিশের পরিদর্শক শিমুল সরকার প্রথম আলোকে বলেন, একজন সহকারী জজকে হুমকির অভিযোগে বিচারকের মৌখিক নির্দেশে দুপুরে এক ব্যক্তিকে আদালতের দ্বিতীয়তলা থেকে আটক করা হয়েছিল। সন্ধ্যায় আইনজীবীদের হস্তক্ষেপে ওই ব্যক্তি বিচারকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তখন একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর জিম্মায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেন ওই সহকারী জজ। সন্ধ্যার পর আদালতের হাজতখানা থেকে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।