সিলেটে বর্তমান ও সাবেক মেয়রের ‘গোপন বৈঠক’ ঘিরে কৌতূহল

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী (বাঁয়ে) ও সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠক। গতকাল শুক্রবার বিকেলেছবি : সংগৃহীত

সিলেট নগরে নির্ধারিত নতুন গৃহকর নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। কেউ বলছেন, বিদায়ী মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী দায়িত্ব হস্তান্তরের আগে গৃহকর নির্ধারণ করেছেন। কেউ কেউ বলছেন, বিদায়ী মেয়রের স্থগিত রাখা গৃহকরের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে সমালোচনার মুখে পড়েছেন নতুন মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
নতুন ও সাবেক মেয়রের পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা যখন তুঙ্গে, তখনই তাঁরা দুজন ‘গোপন বৈঠক’ করে নতুনভাবে আলোচনায় এলেন। তাঁদের বৈঠকের খবরটি আজ শনিবার জানাজানি হয়। বৈঠক-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সিলেটের একটি আঞ্চলিক সংবাদপত্রের কার্যালয়ে গতকাল শুক্রবার বিকেলে এ বৈঠক হয়। বর্তমান ও সাবেক মেয়র গৃহকর নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতেই এ বৈঠকে বসেছিলেন।

এর আগে পঞ্চবার্ষিক কর পুনর্মূল্যায়নের পর গত ৩০ এপ্রিল থেকে সিটি করপোরেশন নতুন নির্ধারিত বার্ষিক গৃহকর (হোল্ডিং ট্যাক্স) অনুযায়ী ভবনমালিকদের গৃহকর পরিশোধের নোটিশ দেওয়া শুরু করে। এরপর নগরের প্রায় পৌনে এক লাখ ভবনমালিকের গৃহকর ৫ থেকে ৫০০ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী বাসিন্দারা। এ নিয়ে নগরজুড়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এর পর থেকে প্রতিদিন নগরের বিভিন্ন সংগঠন গৃহকর বাতিলের দাবিতে নিয়মিত আন্দোলন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন শুরু করে।
সিটি করপোরেশনের রাজস্ব শাখার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ সালে মাঠপর্যায়ে অনুসন্ধান শেষে হোল্ডিং সংখ্যা পুনর্নির্ধারিত হয়। এতে পুরোনো ২৭টি ওয়ার্ডে হোল্ডিং নির্ধারিত হয় ৭৫ হাজার ৪৩০টি। এসবের গৃহকর আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১১৩ কোটি ২৭ লাখ ৭ হাজার ৪০০ টাকা। নতুন গৃহকর ধার্যের সময় ধরা হয় ২০২১-২২ সাল। সেই করারোপের তালিকাই ৩০ এপ্রিল প্রকাশ করা হয়েছে। তবে নতুনভাবে যুক্ত হওয়া ১৫টি ওয়ার্ডের হোল্ডিং এ তালিকায় আসেনি। নতুন গৃহকর নিয়ে আপত্তি থাকলে ১৪ মে পর্যন্ত ভুক্তভোগী বাসিন্দারা আপত্তি জানাতে পারবেন। পরে রিভিউ বোর্ডে শুনানির মাধ্যমে তা নিষ্পত্তি করা হবে।

করপোরেশনের একটি সূত্রের দাবি, সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিগত পরিষদের গৃহকরবিষয়ক সিদ্ধান্তের বাস্তবায়নই বর্তমান মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন পরিষদ করছে। যদিও আরিফুল হক গত বৃহস্পতিবার নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তাঁর পরিষদ পুনর্মূল্যায়ন করেছিল ঠিকই, তবে নগরবাসীর আপত্তির কারণে নতুন গৃহকর স্থগিত করেছিল।
নতুন গৃহকর প্রকাশের পরপরই প্রতিদিন নগরের বিভিন্ন স্থানে এ সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন সংগঠন সভা, সমাবেশ, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। এ অবস্থায় বর্তমান ও সাবেক মেয়রের বৈঠকের বিষয়টি জানাজানি হয়। বৈঠক-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিকেল পাঁচটা থেকে সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত বর্তমান ও সাবেক মেয়র বৈঠকে বসেন। এ সময় তাঁরা গৃহকর নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় একান্তে কথা বলেন।

বৈঠকের বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করলে বর্তমান মেয়র ও সাবেক মেয়র উভয়েই বৈঠকটিকে সৌজন্য সাক্ষাৎ বলে মন্তব্য করেছেন। তাঁরা জানান, এটা কোনো গোপন বৈঠক ছিল না। তবে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি নতুন গৃহকর নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
আরিফুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বিগত পরিষদ অ্যাসেসম্যান্ট করেছিলাম। কিন্তু সে অ্যাসেসমেন্টে যে পরিমাণ গৃহকর দেওয়ার বিষয়টি এসেছে, সেটা অসহনীয় বলে নাগরিকেরা মতামত দিয়েছিলেন। সে কারণেই ওই গৃহকর স্থগিত করেছিলাম। এখন সেটাই বাস্তবায়িত হওয়ার পর নতুন করে নাগরিকদের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। এ অবস্থায় বর্তমান মেয়রকে পরামর্শ দিয়েছি, নতুন গৃহকর স্থগিত করে নাগরিকদের সঙ্গে আলাপ করে যৌক্তিকভাবে গৃহকর নির্ধারণ করা হোক। মেয়র বিষয়টি আন্তরিকভাবে নিয়েছেন এবং নগরবাসীর মতামতের পরিপ্রেক্ষিতেই নতুন সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন।’

যোগাযোগ করলে মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সৌজন্য সাক্ষাতে সাবেক মেয়র কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। যেহেতু আমি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, তাই নাগরিকদের বিরুদ্ধে যাবে, এমন কোনো সিদ্ধান্ত অবশ্যই নেব না। আগামীকাল রোববার আমাদের পরিষদের সভা আছে, সেখানে নতুন গৃহকর নিয়ে আলোচনা হবে। নাগরিক থেকে শুরু করে সুশীল সমাজসহ সবার সঙ্গে আলোচনা করেই গৃহকর পুনরায় নির্ধারণ করা হবে। অবশ্যই গৃহকর সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা হবে।’