বিএনপির লোকজনও রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় আসবেন: জাহাঙ্গীর কবির নানক

জনসভাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান ও দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া
ছবি: প্রথম আলো

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৯ জানুয়ারি রাজশাহীতে বিভাগীয় জনসভায় যোগ দেবেন। এ জনসভায় বিএনপির লোকজনও যোগ দেবেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। আজ শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে মাঠ পরিদর্শনের সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর কবির নানক এই মন্তব্য করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর অপর সদস্য আবদুর রহমান ও দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া।

এই জনসভাকে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে—বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুরা এভাবেই মিথ্যার বেসাতি করে থাকেন। তাঁরা ইতিহাস বিকৃত করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করেছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের বিলীন করে দিয়েছিলেন এই টুকু সাহেবেরা। তাঁরা মানুষকে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছেন, মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন। বিএনপি আমাদের কাছে কোনো “সাবজেক্ট” নয়। আমি বিশ্বাস করি, বিএনপির লোকেরাও এই সভায় আসবেন। কারণ তাঁরা এই দেশের নাগরিক। তাঁরা কোনো বিচ্ছিন্ন দ্বীপের নাগরিক নন।’

পুরো উত্তরবঙ্গের মানুষ এই জনসভার অপেক্ষায় আছেন উল্লেখ করে জাহাঙ্গীর কবির বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় মাদ্রাসা ময়দানকে (সভাস্থল) ছাপিয়ে সমগ্র রাজশাহী শহর এক উত্তাল জনসমুদ্রে পরিণত হবে। জনসভার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

এই জনসভা থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে নানক বলেন, নির্বাচনী প্রচার অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ একটি নির্বাচনমুখী দল। আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্যই হচ্ছে নির্বাচন করা, তাতে জনগণকে সম্পৃক্ত করা।

মঞ্চ নির্মাণের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠে (বর্তমানে হাজী মুহম্মদ মুহসীন সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে) জনসভায় বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী। মাঠ প্রস্তুত হয়ে গেছে জানিয়ে আবদুর রহমান বলেন, ‘জনসভার মাঠ প্রায় প্রস্তুত। এই জনসভায় নেত্রী গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেবেন। শহরজুড়ে এমনকি গোটা রাজশাহী বিভাগের মানুষের মধ্যে যে ধরনের প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে, মানুষ অধীর আগ্রহে প্রাণপ্রিয় নেত্রীকে একনজর দেখার জন্য অপেক্ষা করছেন। তাঁদের প্রাণের সব উচ্ছ্বাস মিশিয়ে তাঁরা নেত্রীকে বরণ করে নেবেন এবং উত্তরবঙ্গবাসীর উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেবেন।’

বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি প্রসঙ্গে বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ‘আমরা মনে করি কোনো সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনে বিএনপি মানুষের ভোটে নির্বাচিত হবে না। সুতরাং তারা (বিএনপি) এই নির্বাচনটাকেই ভন্ডুল করার জন্য এই ধরনের অসাংবিধানিক দাবিগুলো তুলছে। এই দাবিকে এই দেশের মানুষ পাত্তা দিচ্ছে না, আমলে নিচ্ছে না। নির্বাচন কমিশনের অধীনেই নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচন অবাধ এবং নিরপেক্ষ হবে।’

মাঠের মধ্যে একাধিক বাঁশের বেড়া দিয়ে মাঠকে কয়েক ভাগে ভাগ করে ফেলা হয়েছে
ছবি: প্রথম আলো

প্রস্তুত জনসভাস্থল

রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠ (বর্তমানে হাজী মুহম্মদ মুহসীন সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে) প্রধানমন্ত্রীর জনসভার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। মাঠের উত্তর পাশে প্রধান প্রবেশপথে বাঁশ দিয়ে এমনভাবে গেট তৈরি করা হয়েছে, যেন সুশৃঙ্খলভাবে মানুষ ভেতরে ঢুকতে পারেন। মাঠের মধ্যে একাধিক বাঁশের বেড়া দিয়ে মাঠকে কয়েক ভাগে ভাগ করে ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া মাঠে বেশিসংখ্যক মানুষের স্থান সংকুলানের জন্য মাঠের দক্ষিণ পাশের দেয়ালটি অপসারণ করা হয়েছে। এতে দক্ষিণ পাশের রাস্তাটি এখন মাঠের সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে।

ওই রাস্তার পূর্ব ও পশ্চিম পাশেও বিশেষ প্রবেশপথ নির্মাণ করা হয়েছে। মঞ্চ নির্মাণের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন মঞ্চের দুই পাশের কিছু বাঁশের কাঠামো তৈরির কাজ চলছে। পুরো মঞ্চটিই সাদা কাপড়ে মুড়ে দেওয়া হয়েছে। মঞ্চের পাশের কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রাচীরও সাদা কাপড়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। মাইকগুলো মাঠের মধ্যে এনে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে একটি একটি করে মাইক নির্দিষ্ট স্থানে এসে বাঁধা হচ্ছে। অনুষ্ঠানে আসা নেতা-কর্মীদের জন্য প্লাস্টিকের অস্থায়ী টয়লেট বসানো হয়েছে।

আজ দুপুরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় তিন নেতার মাঠ পরিদর্শনের সময় তাঁদের সঙ্গে ছিলেন রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বেগম আখতার জাহান, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ডাবলু সরকার, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনিল সরকার, সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ প্রমুখ।