প্রধান সমস্যা মাদক, বেকারত্ব

মিল-কারখানা বন্ধ হওয়ায় এই ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যা কমেছে। একই কারণে অনেক শ্রমিক বেকার হয়ে গেছেন।

খুলনার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ক্রিসেন্ট জুট মিলস বন্ধ করে দেওয়ায় শ্রমিক কলোনির ভবন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে
ছবি: প্রথম আলো

আদমজী পাটকল বন্ধ হওয়ার পর আকার ও শ্রমিকের সংখ্যার দিক দিয়ে খুলনার ক্রিসেন্ট ছিল দেশের সবচেয়ে বড় পাটকল। ১১৩ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত পাটকলটি ২০২০ সালের জুলাইয়ে বন্ধ হওয়ার সময়ও সেখানে কাজ করতেন প্রায় ১১ হাজার শ্রমিক। শ্রমিকদের বড় একটা অংশ স্থায়ীভাবে গ্রামে চলে গেছে। যাঁরা এখনো আছেন, তাঁদের উদ্বিগ্ন থাকতে হয় কর্মসংস্থান নিয়ে।

খুলনা সিটি করপোরেশনের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়েছে ক্রিসেন্ট জুট মিল। এ ছাড়া খালিশপুর জুট মিলস (পিপলস), খুলনা বিদ্যুৎকেন্দ্র এসব শিল্পকারখানাও ছিল এই ওয়ার্ডে। মিল-কারখানা বন্ধ হওয়ায় এই ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যাও কমেছে। ভোটারদের একটা বড় অংশই থাকছে শহরের অন্যান্য ওয়ার্ডে।

৮ নম্বর ওয়ার্ড উত্তরে ভৈরব নদ ও গোয়ালপাড়া পাওয়ার হাউসের শেষ সীমানা পর্যন্ত বিস্তৃত। দক্ষিণে বিস্তৃত বিআইডিসি রোড ও ক্রিসেন্ট জুট মিলের শেষ সীমানা পর্যন্ত। পূর্বে ভৈরব নদ ও পশ্চিমে বিআইডিসি রোড। ওয়ার্ডের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৮ হাজার। পরিবারের সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। ২০০৭ সালের আগে এখানে প্রায় ১৪ হাজার ভোটার ছিলেন। ২০০৮ সাল থেকে এখানে ভোটার সংখ্যা সাড়ে ৭ হাজারের আশপাশে ছিল। গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় ৭ হাজার ৩০০ জনের মতো ভোটার থাকলেও এ বছর ভোটার সংখ্যা কমে ৬ হাজার ৮০০ হয়েছে।

ক্রিসেন্ট জুট মিলে ১৫ বছর ধরে বদলি শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন মো. ফারুক। আট বছর বয়সে বরিশালের বাকেরগঞ্জ থেকে খুলনায় আসেন তিনি। আগে মিলের শ্রমিক কলোনিতে থাকতেন। মিল বন্ধের পর এখন রেললাইনের বস্তিতে দুই হাজার টাকা ভাড়ায় এক কক্ষের একটি বাসায় উঠেছেন। পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে এখন হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁকে। ফারুক বলেন, ‘ধারদেনা করে চলতেছি। গ্রামের বাড়িত তো কোনো কাজ নাই, তাই এখনো এখানে আছি। পরের ইজিবাইক ভাড়া চালাই। মালিককে ৫০০ টাকা দিয়ে ঘরে ২০০ টাকা আনতেই কষ্ট হয়ে যায়। এখানের মানুষের কাজকাম নাই। আয়-উন্নতির চিন্তাটাই সবচেয়ে বড় চিন্তা হয়ে দাঁড়াইছে।’

২০ এপ্রিল সরেজমিনে ওয়ার্ডের বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কলকারখানা বন্ধ হওয়ায় ওই এলাকায় কাজের সুযোগ নেই মানুষের। পাটকলে কাজ করা স্থায়ী শ্রমিকেরা টাকাপয়সা পেলেও বদলি শ্রমিকেরা তেমন কিছু পাননি। লোকজন দিনমজুর, রাজমিস্ত্রির জোগালি, ইজিবাইক-রিকশা চালানোসহ ছোটখাটো বিভিন্ন কাজের চেষ্টা করছেন। তবে সব দিন কাজ না মেলায় তাঁদের কষ্টে থাকতে হয়। আবার ৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ১১ নম্বর ওয়ার্ডের পাঁচতলা নিউ কলোনিতে প্রায় আড়াই শ পরিবার, ১০ নম্বর ওয়ার্ডে ১৩০টির মতো, ৭ নম্বর ওয়ার্ডে ৪০টির মতো ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে রায়ের মহলে বেশ কিছু পরিবার বাস করছে। ওয়ার্ডে মাদকের ব্যাপক বিস্তার আছে। আছে সুপেয় পানি আর গণশৌচাগারের সংকট।

যুবলীগ নেতা ও খালিশপুর বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সাহিদুর রহমান ২০১৩ সাল থেকে পাঁচ বছর এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। এবারও নির্বাচন করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, একসময় খুলনাকে চালাত এই ওয়ার্ড। এখন কলকারখানা বন্ধ। সবচেয়ে বড় ক্রিসেন্ট আর পিপলস জুট মিল বন্ধ হওয়ায় এখানে ২০ হাজার মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। অনেকে চলে গেছেন। তারপরও অনেকেই আছেন। মানুষের উপার্জনের কোনো সুযোগ বা জায়গা নেই, এটাই বড় সমস্যা। ওয়ার্ডের রেললাইনে মাদকের আখড়া। দিনরাত মাদক কেনাবেচা ও সেবন চলে।

ক্রিসেন্ট জুট মিলের সিবিএর সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. সোহরাব হোসেন এবার কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করতে চান। তিনি বলেন, ‘বড় সমস্যা হচ্ছে আয়ের পথ নেই, রেললাইনের বস্তিতে মাদক বিক্রি হয় ও পাবলিক টয়লেটের স্বল্পতা। বেশির ভাগ অবহেলিত শ্রমিক এই ওয়ার্ডে বাস করেন। রাজপথে থেকে শ্রমিকদের নেতৃত্ব দিয়েছি, তাই এখনো তাঁদের পাশে থাকতে চাই।’