মধ্যরাতের বৃষ্টিতে সিলেট নগরে জলাবদ্ধতা

সিলেটে মধ্যরাতের বৃষ্টিতে গতকাল শনিবার জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। নগরের পায়রা এলাকায়
ছবি : প্রথম আলো

মধ্যরাতের বৃষ্টিতে সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। গতকাল শনিবার রাত সোয়া ১১টা থেকে টানা ১ ঘণ্টার ভারী বৃষ্টিতে কোথাও গোড়ালি, কোথাও হাঁটু পর্যন্ত পানি ওঠে। তবে কয়েক ঘণ্টা পর আজ রোববার ভোরের দিকে এ পানি নেমেছে।

নগরের জিন্দাবাজার, জল্লারপাড়, বারুতখানা, হাওয়াপাড়া, দরগাগেট, চৌহাট্টা, লোহারপাড়া, পায়রা, লামাবাজার, সোবহানীঘাট, তালতলা, ঘাসিটুলা, মেন্দিবাগ, কুয়ারপাড়, পাঠানটুলা, মদিনা মার্কেটসহ অর্ধশতাধিক এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এসব এলাকার প্রধান প্রধান সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। এ ছাড়া অনেক বাসাবাড়ি ও দোকানপাটেও পানি জমে ছিল। জিন্দাবাজার এলাকার রাজা ম্যানশনে পানি ওঠায় সেখানকার বই ব্যবসায়ীদের লাখো টাকার বই বিনষ্ট হয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।

সিলেট আবহাওয়া কার্যালয়ের পেশাগত সহকারী আবদুল মুহিত প্রথম আলোকে বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় আজ রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত ১৬৩ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তবে গতকাল রাত ১১টার পর থেকে টানা ৪ ঘণ্টার বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে।

জলাবদ্ধতায় ভুক্তভোগী একাধিক ব্যক্তি বলেন, রাতের বেলা এমন জলাবদ্ধতায় বিপাকে পড়েন নগরের নিচু এলাকার মানুষ। ভোগান্তি কম ছিল না ব্যবসায়ীদেরও। বিভিন্ন বাসার নিচতলা পানিতে প্লাবিত হওয়ায় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাসিন্দারা খাটের ওপর তুলে রাখেন। অনেক বাসা ও দোকানের মেঝেতে থাকা জিনিসপত্র ভিজে নষ্ট হয়েছে।

নগরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের পায়রা এলাকার বাসিন্দা রাজীব চৌধুরী বলেন, বৃষ্টি শুরু হওয়ার ১৫ মিনিটের মধ্যে পায়রা এলাকায় হাঁটু পর্যন্ত পানি জমে। অনেক বাসাবাড়ি ও দোকানে পানি ওঠে। এতে স্থানীয় লোকজনকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই পায়রা এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। অথচ এর কোনো সমাধান সিটি করপোরেশন করছে না। এ অবস্থায় স্থানীয় মানুষের ভোগান্তি দূর হচ্ছে না।

নগরের একাধিক বাসিন্দার ভাষ্য, প্রধানত চারটি কারণে নগরে অল্প সময়ের বৃষ্টিতেই এখন জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। এগুলো হচ্ছে নগরের ছড়াগুলোয় (প্রাকৃতিক খাল) অপরিকল্পিত উন্নয়নকাজ, অনেক ড্রেনের উন্নয়নকাজ ধীরগতিতে চলায় পানি চলাচলের স্বাভাবিক গতিপথ রুদ্ধ হয়ে পড়া, ছড়া-নর্দমার তলদেশে প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন বর্জ্যে ভরাট হয়ে থাকা এবং চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে নগরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত সুরমা নদীতে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকা।

জলাবদ্ধতার দুর্ভোগে ক্ষুব্ধ শাহ সিকান্দার আহমদ শাকির বলেন, শহরের অধিকাংশ ড্রেনের কাজ অর্ধসম্পন্ন। কাজ চলছে ধীরগতিতে। তাই বৃষ্টি হলেই পানি নামতে সমস্যা হচ্ছে। এ ছাড়া অনেক নালা, নর্দমা ও ছড়া ভরাট হয়ে গেছে। পানি সহজে নামতে পারে না।

সিলেট নগরে জলাবদ্ধতা দেখা দেওয়ার পর থেকেই এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে জোর আলোচনা চলছে। ফেসবুকে অনেকেই লিখেছেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ গত এক যুগে প্রকল্পের পর প্রকল্প নিয়েছে। অথচ নগরবাসী এর কাঙ্ক্ষিত সুফল পাননি। এত টাকা খরচে তাহলে নগরবাসীর কী লাভ হলো, অনেকে সে প্রশ্ন তুলেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারী বৃষ্টিতে নগরে যেন জলাবদ্ধতা দেখা না দেয়, সে জন্য চলতি বছরে ২০৯ কোটি টাকার কাজ করছে সিটি করপোরেশন। আর গত ১২ বছরে এ খাতে খরচ হয়েছে ৮৬৯ কোটি টাকা। এত টাকা খরচের পরও জলাবদ্ধতার সমস্যা পুরোপুরি দূর হয়নি বলে নগরবাসীর অভিযোগ।

সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, জুনের মাঝামাঝি সিলেটে যে বন্যা হয়েছিল, তখন উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে পলিও নগরের নালা-নর্দমায় জমেছে। পাশাপাশি অনেক নর্দমা বর্জ্যেও ভরাট হয়ে আছে। বন্যা পরিস্থিতির কারণে এসব অপসারণ করা যায়নি। এ কারণে অল্প সময়ের বৃষ্টিতেই নগরের অধিকাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতা দেয়।

জলাবদ্ধতা নিরসনে পরিকল্পিতভাবে উন্নয়নকাজ চলছে দাবি করে নূর আজিজুর রহমান বলেন, অতীতে সামান্য বৃষ্টিতেই দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিত, এখন সেটা হচ্ছে না। এ ছাড়া দ্রুততার সঙ্গে নগরের ছড়া ও নালা-নর্দমাগুলো পরিচ্ছন্ন করার পাশাপাশি অসম্পন্ন কাজও শিগগির শেষ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব কাজ সম্পন্ন হলে নগরের জলাবদ্ধতা অনেকটাই নিরসন হবে।