নড়াইলে আ. লীগ নেতার মাদক সেবনের ভিডিও ভাইরাল

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার শালনগর ইউপি চেয়ারম্যান লাবু মিয়া
ছবি: সংগৃহীত

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার শালনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. লাবু মিয়ার (৫৫) মাদক সেবনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। লাবু মিয়া লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য। তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর বাড়ি ওই ইউনিয়নের পারশালনগর গ্রামে।

দুই দিন ধরে ভিডিওটি বিভিন্ন ফেসবুক আইডি, ফেসবুক গ্রুপ ও ইউটিউবে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটি শেয়ার করে তাঁকে মাদক ব্যবসায়ী বলেও দাবি করা হয়েছে। ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওর নিচে তাঁর বিরুদ্ধে নানা মন্তব্য করছেন বিভিন্ন লোকজন। মন্তব্যে অনেকেই তাঁর গ্রেপ্তার, বরখাস্ত ও শাস্তি দাবি করেছেন। এ বিষয়ে প্রশাসন থেকে তাঁর কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।

লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মশিয়ূর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভিডিওটি দেখেছি। এটি দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। প্রধানমন্ত্রীর যশোরের জনসভা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় খোঁজখবর নিতে পারিনি।’

১ মিনিট ১৯ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, একটি টিনের বেড়া দেওয়া ঘরে মেঝেতে খয়েরি রঙের চাদর বিছানো। তার ওপর বসা তিনজন ব্যক্তি। অন্য দুজনের চেহারা স্পষ্ট নয়। সাদা পায়জামা ও পাঞ্জাবি পরা লাবু মিয়াকে দেখা যাচ্ছে ইয়াবা সেবন করতে। তাঁর ইয়াবা সেবনে সহযোগিতা করছেন পাশে বসা ওই দুজন।

স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি ভিডিওটি দেখে জানান, মাদক সেবনের স্থানটি ওই ইউনিয়নের মাকড়াইল নদীর চরে দরিদ্রদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই আশ্রয়ণ কেন্দ্রে ঘনিষ্ঠদের নিয়ে নিয়মিত আড্ডা দেন তিনি। লাবু মিয়ার নেতৃত্বে ওই আশ্রয়ণ কেন্দ্র এলাকা মাদকের একটি বড় ঘাঁটি হয়েছে। ইউনিয়নের আরও কয়েকটি স্থানে মাদকের আড্ডা বসে তাঁর নেতৃত্বে।

জানতে চাইলে লাবু মিয়া মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভিডিওটি ফেসবুকে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় দেখেছি। আমি মাদকের সঙ্গে জড়িত নই। আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা ওই ভিডিওটি সুপার এডিট করে ছড়িয়ে দিয়েছে।’

লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক (তদন্ত) হারান চন্দ্র পাল বলেন, ভিডিওটি দেখে মনে হচ্ছে, বস্তি জাতীয় ঘরে বসে তিনি মাদক সেবন করছেন।

ভিডিওটি নজরে আসার পর জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় এই চেয়ারম্যানের কাছে লিখিতভাবে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আজগর আলী। ইউএনও বলেন, তিনি ব্যাখ্যা দেওয়ার পর তা জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হবে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

পুলিশ সুপার সাদিরা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক দিন আগে জেলার জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে এসব ব্যাপারে বৈঠক করা হয়েছে। তারপর এ অবস্থা। ভিডিওটি নজরে আসার পর এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তিনি এলাকায় নেই। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির বিষয়ে অবগত আছে।

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি দেখেছেন বলে জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবাস চন্দ্র বোস। তিনি বলেন, ‘এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। তথ্য–উপাত্তের ভিত্তিতে অভিযোগ পেলে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মাদকসেবী বা মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউ দলে থাকতে পারবে না।’