নন্দীগ্রামে ইউরিয়া না পেয়ে খালি হাতে ফিরলেন কয়েক শ কৃষক

ইউরিয়া কিনতে ডিলার মেসার্স শাহজাহান হাসনাতের দোকানের সামনে কৃষকেরা ভিড় করেছেন। আজ বেলা সাড়ে ১১ টায় বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার বিজরুল বাজার এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার বিজরুল বাজারের এক সারের ডিলারের দোকানের সামনে কয়েক শ কৃষক দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ইউরিয়া সারের জন্য অপেক্ষা করছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর অনেক কৃষক সার না পেয়ে বাড়ি ফিরেছেন খালি হাতে। কেউ পেলেও পরিমাণ ছিল চাহিদার তুলনায় খুবই কম। এ ঘটনা আজ রোববারের।

সার না পাওয়া কয়েকজন কৃষক বলেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় অধিকাংশ ডিলারের গুদামে পর্যাপ্ত সার নেই। প্রয়োজনীয় পরিমাণে সার না পেলে ফসলের উৎপাদন ভালো হবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ইউরিয়ার সারের সংকট প্রকট আকার ধারণ করার কথা উল্লেখ করে কয়েকজন কৃষক বলেন, কিছুদিন আগে খেতে আমন ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে। চারা লাগানোর দুই সপ্তাহের মধ্যেই খেতে ইউরিয়া দিতে হবে। অথচ কোথাও চাহিদা অনুযায়ী ইউরিয়া মিলছে না। ইউরিয়া কেনার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমা দিয়ে কৃষি বিভাগ থেকে রসিদ সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এরপর সেই রসিদ নিয়ে যেতে হচ্ছে ডিলারের কাছে। তবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও ইউরিয়া না ফেয়ে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে।

রোববার বিজরুল বাজারের মেসার্স শাহজাহান হাসনাত নামের এক ডিলারের দোকান থেকে কৃষকদের ইউরিয়া সার দেওয়া হয়। ইউরিয়ার চাহিদার বিষয়ে জানতে চাইলে ওই ডিলারের দোকানের ব্যবস্থাপক আবু তালেব বলেন, চাহিদা তুলনায় সারের সরবরাহ অপ্রতুল হওয়ায় আনুমানিক ৩০০ কৃষককে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। তবে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তার কাছে আগেই রসিদ জমা দেওয়া হয়েছিল। জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাইয়ের পর কৃষি কর্মকর্তা একজন কৃষককে এক বস্তা সারের রসিদ দিয়েছেন। সেই রসিদ জমা নিয়ে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ৪৮০ বস্তা সার বিতরণ করা হয়েছে।

রোববার বেলা ১১টার দিকে বিজরুল বাজারে গিয়ে দেখা যায়, মেসার্স শাহজাহান হাসনাতের গুদামের সামনে হাজার খানেক আমনচাষি ইউরিয়া সারের জন্য অপেক্ষা করছেন। গুদামের পাশেই একটি স্থানে নন্দীগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কৃষকের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি গ্রহণ সাপেক্ষে এক বস্তা ইউরিয়ার জন্য কৃষকের হাতে একটি করে রসিদ ধরিয়ে দিচ্ছেন। এ রসিদ নিতেও কৃষকদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। চাহিদা বেশি হলেও কেউ কেউ এক বস্তা ইউরিয়া পেয়েই রাজ্য জয়ের হাসি নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তবে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও সার না পেয়ে হতাশ মুখ নিয়ে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে অনেক কৃষককে।

বিজরুল গ্রামের কৃষক আবদুল মান্নান বলেন, ‘সকাল আটটা থ্যাকে বসি আচি। হামার দরকার ১০ বস্তা সার। তিন ঘণ্টা রোদে পুড়ে লাইনত দাঁড়ায়ে থাকে শ্যাষে এক বস্তা মিলেছে।’

সার কিনতে আসা কৃষক রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘১০ বিঘা জমিনত ১৫ দিন আগত আমন গাড়চি। বিঘাত ২০ কেজি হিসাবে ৫ বস্তা ইউরিয়া লাগবি। সার মিলাবার পারিচ্চি না। আমনত সার দিবার না পারলে ফসল হবি না, না খ্যায়া থাকা লাগবি।’

ইউরিয়া কিনতে ডিলার মেসার্স শাহজাহান হাসনাতের দোকানের সামনে কৃষকেরা ভিড় করেছেন। আজ বেলা সাড়ে ১১ টায় বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার বিজরুল বাজার এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

নন্দীগ্রাম সদরের একটি ডিলারের দোকানে তিন বস্তা ইউরিয়া কিনতে এসেছিলেন কৃষক আবু জাফর (৫৫)। সারা দিন ঘুরে রোববার বিকেলে খালি হাতে ফিরেন তিনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমন খ্যাতত এখনই ইউরিয়া না পড়লে গাছ থোকাবি না।  ফলনও হবি না। তিন বস্তা ইউরিয়া কিনবার জন্যি সকাল থ্যাকে ডিলারের কাছে ধর্না দিচ্চি। সার পাচ্চি না।’

চলতি মৌসুমে নন্দীগ্রাম উপজেলায় ২০ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। চলতি মাসে সার বরাদ্দ মিলেছে মাত্র ৮৭০ মেট্রিক টন। চাহিদার তুলনায় সারের বরাদ্দ কম হওয়ায় সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

নন্দীগ্রাম বাসস্ট্যান্ড এলাকার মেসার্স গোল্ডেন এন্টারপ্রাইজের গুদামও ইউরিয়াশূন্য। ডিলার মোখলেছার রহমান বলেন, নন্দীগ্রামে রেকর্ড জমিতে আমন চাষ হয়। চাহিদার তুলনায় ইউরিয়ার বরাদ্দ অপ্রতুল। অন্য বছর বগুড়ার যেসব উপজেলায় আমন চাষাবাদ কম হয়, সেখানের ডিলারদের কাছ থেকে ইউরিয়া কিনে এনে কৃষকের কাছে বিক্রি করা হতো। অন্য উপজেলায় সার বিক্রি নিষিদ্ধ করায় সংকট তৈরি হয়েছে।

জানা গেছে, চলতি মৌসুমে নন্দীগ্রাম উপজেলায় ২০ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। চলতি মাসে সার বরাদ্দ মিলেছে মাত্র ৮৭০ মেট্রিক টন। চাহিদার তুলনায় সারের বরাদ্দ কম হওয়ায় সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক দুলাল হোসেন বলেন, আগস্ট মাসে ইউরিয়া সার বরাদ্দ মিলেছে ৯ হাজার ৩৫৫ মেট্রিক টন। এ ছাড়া ১০ হাজার মেট্রিক টন করে টিএসপি ও এমওপি সারও ডিলাররা উত্তোলন করেছেন। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সাত হাজার মেট্রিক টন সার অতিরিক্ত বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।