টাকা নিয়ে চাকরি না দিয়ে এলাকা ছাড়ার অভিযোগ মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে

নেত্রকোনা জেলার মানচিত্র

চাকরি দেবেন বলে টাকা নিয়েছিলেন। এখন চাকরি না দিয়ে এলাকা ছেড়েছেন। এখন চাকরিপ্রত্যাশীরা মুঠোফোনে কল দিলেও ধরছেন না তিনি। এই অভিযোগ পাওয়া গেছে নেত্রকোনার মদন উপজেলার কদমশ্রী দাখিল মাদ্রাসার সুপার এ টি এম সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে আজ রোববার বিকেলে কদমশ্রী এলাকার হারেছ মিয়া নামের এক ব্যক্তি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

লিখিত অভিযোগটি পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফিকুল বারী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। সুপার তাঁর মেয়ের পরিচয় গোপন করেছেন। নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে আমার কার্যালয়ে এলে তখন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নাদিয়া মাহমুদ বলেন, ‘চাকরিপ্রত্যাশীদের যাচাই-বাছাই করে থাকে মাদ্রাসার কমিটি। সুপার তাঁর মেয়ের পরিচয় আমাদের কাছে গোপন করেছেন। এর দায় সুপারকেই নিতে হবে। টাকা নেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই।’

অভিযোগে বিষয়ে জানতে চাইলে মাদ্রাসা সুপার এ টি এম সাইফুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, ‘আমার মেয়ে নিজ মেধায় চাকরি পেয়েছে। সারা দেশেই তো নিয়োগে কিছু সমস্যা হয়ে থাকে। এলাকায় উত্তেজনার সৃষ্টি হওয়ায় নিয়োগের পর থেকে আমি মাদ্রাসায় যাই না। কারও কাছ থেকে টাকা নেওয়ার প্রমাণ দেখাতে পারবে না। এসব মিথ্যা অপবাদ।’

স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, কদমশ্রী দাখিল মাদ্রাসার জন্য মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর, নিরাপত্তাকর্মী ও আয়া পদে একজন করে লোকবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এরপর তিন পদে ২২ জন চাকরিপ্রত্যাশী আবেদন করেন। পরে গত ২৭ জানুয়ারি নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

নিয়োগ বোর্ডে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর মহাপরিচালকের প্রতিনিধি হিসেবে অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নাদিয়া মাহমুদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সঙ্গে সদস্যসচিব রাখা হয় মাদ্রাসার সুপার এ টি এম সাইফুল ইসলামকে। অথচ বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে, চাকরিপ্রত্যাশীদের কোনো আত্মীয় নিয়োগ বোর্ডে থাকতে পারবেন না।

চাকরির আবেদনকারী অভিযোগকারীদের দাবি, পরিচয় গোপন করে নিজের মেয়ে তানিয়া আক্তারকে মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার পদে চাকরি দিয়েছেন মাদ্রাসা সুপার। অন্য দুই পদের জন্য মোট ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া চাকরি দেওয়ার কথা বলে সুপার ও মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি মিলে আরও তিনজন চাকরিপ্রত্যাশীর কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। চাকরি না পেয়ে ওই প্রার্থীরা পাওনা টাকা চাওয়ায় সুপার ও সভাপতি নিয়োগ পরীক্ষার পর থেকে এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দিয়েছেন। এখন চাকরিপ্রত্যাশীদের কলও ধরছেন না।

কদমশ্রী গ্রামের সুনীল চন্দ্র দাস প্রথম আলোকে বলেন, নিরাপত্তা প্রহরীর চাকরির জন্য মাদ্রাসা সুপারের সঙ্গে পাঁচ লাখ টাকার চুক্তি হয়। তাঁর কাছ থেকে অগ্রিম ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা নেন তিনি। এখন বেশি টাকা নিয়ে অন্য একজনকে চাকরি দিয়েছেন।

রামদাসখিলা গ্রামের বাসিন্দা আবুল হাসান বলেন, তাঁর শ্যালকের স্ত্রীকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে সুপার ও সভাপতি নগদ ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা নিয়েছেন। চাকরি দেননি। এখন টাকা চাওয়ায় তাঁরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে আছেন।

মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটি ও নিয়োগ কমিটির সদস্য শাহ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুপার তাঁর মেয়ের পরিচয় গোপন করে আমার কাছ থেকে ফলাফল শিটে স্বাক্ষর নিয়েছেন। নিয়োগের পর থেকে তিনি পলাতক আছেন। চাকরি দেওয়ার কথা বলে অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন তিনি। এখন চাকরি না দেওয়ায় প্রার্থীরা আমার কাছে নালিশ দিচ্ছেন। আমি তাঁদের থানায় গিয়ে আইনি পরামর্শ নিতে বলেছি।’